পূর্ব ভারতের বিহার রাজ্যের পালিগঞ্জে বিধানসভা নির্বাচনের সময় একটি ভোট কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভোটাররা। ২৮ অক্টোবর, ২০২০। ২০২১ সালের এপ্রিল ও মে মাসে ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়েছে। ( এপি / আফতাব আলম সিদ্দিকী )

ভারতের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন ২০২১ : সাংবাদিক নিরাপত্তা নির্দেশিকা

২০২১ সালের মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে ভারতের অসম, কেরল, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ ও পুদুচেরিতে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে।

এই নির্বাচন কভার করতে যাওয়া গণমাধ্যম কর্মীদের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। যেমন শারীরিক নিগ্রহ, হুমকি ও হেনস্থা ; অনলাইনে বুলি করা ; কোভিড-১৯-এ সংক্রমণ ; গ্রেফতার ও আটক ; এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করা সহ প্রতিবেদন তৈরিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। সিপিজের গবেষণা অনুযায়ী, অন্তত দুই জন সাংবাদিক ২০২০ সালে ভারতে কাজ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন। 

কেরলের দ্য ফেডারেল নিউজ ওয়েবসাইটে কর্মরত সহযোগী সম্পাদক শাহিনা কে কে সিপিজেকে ফোন মারফত জানিয়েছেন, ”সাধারণত, রিপোর্ট করার সময় কী ধরনের বিপদের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই বিষয়ে নিউজ এডিটর বা ব্যুরো চিফেরা রিপোর্টারদের কিছু বলেন না। সামনে কী হবে তা বোঝার মতো ব্যবস্থা আমাদের নেই এবং এই ধরনের বিপদকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তার পরিকল্পনা করার ব্যবস্থাও নেই। রিপোর্টাররা শুধু [ মাঠে নেমে পড়েন।]”

নির্বাচন কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের জন্য সিপিজের এমার্জিন্সি বিভাগ নিরাপত্তা নির্দেশিকা আপডেট করেছে। বিধানসভা নির্বাচনের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে সেই বিষয়ে সম্পাদক, রিপোর্টার ও চিত্র সাংবাদিকদের জন্য তথ্য রয়েছে এতে। পাশাপাশি রয়েছে কীভাবে ডিজিটাল, শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব সেই বিষয়ক তথ্য।

আপনি নির্বাচনী সুরক্ষা গাইডের পিডিএফ বাংলায় ডাউনলোড করতে পারেন।

যোগাযোগ ও সূত্র

সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সাংবাদিকরা [email protected] মারফত সিপিজের এমার্জেন্সি বিভাগে অথবা সিপিজের এশিয়া প্রোগ্রামের সিনিয়র গবেষক আলিয়া ইফতিখারকে [email protected] অথবা ভারতীয় করসপন্ডেন্ট কুনাল মজুমদারকে [email protected] ঠিকানায়  যোগাযোগ করতে পারেন।

এর পাশাপাশি, সিপিজের রিসোর্স কেন্দ্রের অতিরিক্ত তথ্য ও উপকরণ রয়েছে অ্যাসাইনমেন্টের আগে প্রস্তুতি ঘটনা পরবর্তী সহযোগিতার জন্য।

ভারতের নয়া দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে কাজ করছেন সাংবাদিকরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭। ( এপি / আলতাফ কাদরি )

 সম্পাদকের নিরাপত্তা চেকলিস্ট

বিধানসভা নির্বাচনের সময় বা পরে খুব অল্প সময়ের নোটিসে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে পাঠাতে পারে সম্পাদকরা বা নিউজরুম কর্তারা। কর্মীদের ঝুঁকি কমাতে এই চেকলিস্টে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও ধাপ যা মাথায় রাখা দরকার।

কর্মীদের জন্য বিবেচনা

  • অ্যাসাইনমেন্টটির জন্য নির্বাচিত কর্মীটি যথেষ্ট অভিজ্ঞ কি?
  • কোনও নির্বাচিত কর্মী কি কোভিড-১৯-এর দুর্বলতা বিভাগে পড়ছে বা পরিবারের সদস্য / নির্ভরশীল ব্যক্তি আছে যারা তাঁর উপর ভরসা করে?
  • যদি সম্ভাব্য বিরূপ ইভেন্ট থেকে ( যেমন নির্বাচনী প্রতিবাদ ) রিপোর্ট করতে হয়, তাহলে কোনও কর্মী প্রোফাইল, লিঙ্গ, ধর্ম বা এথনিসিটির কারণে কি নিশানার মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
  • অ্যাসাইনমেন্টের জন্য নির্বাচিত কর্মী কি শারীরিকভাবে সক্ষম? অ্যাসাইনমেন্টের সময় আক্রান্ত হতে পারে এমন কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে?
  • কোনও নির্বাচিত কর্মীর নির্দিষ্ট কোনও কাজ কি বাকিদের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে? উদাহরণ স্বরূপ, অকুস্থলের খুব কাছে গিয়ে চিত্রসাংবাদিকরা কাজ করেন।

সরঞ্জাম ও পরিবহণ

  • নির্বাচিত কর্মীর সঙ্গে কি কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে? এবং তাদের কি ভালো মানের মুখের মাস্ক ও অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে?
  • যদি তীব্র আন্দোলনের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে কি বিশেষ নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম যেমন সেফটি হেলমেট, সেফটি গগলস, দেহ রক্ষক, কাঁদানে গ্যাস রেসপিরেটরস ও মেডিকেল কিট কি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে? এই সরঞ্জামগুলি যথাযথভাবে ব্যবহারের পদ্ধতি কি কর্মীরা জানেন? 
  • নির্বাচিত কর্মী কি নিজেই গাড়ি চালাচ্ছেন? এবং তাদের গাড়ি কি রাস্তায় চলার উপযুক্ত ও যথাযথ?
  • টিমের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করা হবে প্রয়োজনে তা কি ঠিক করা হয়েছে? যদি দরকার পড়ে বিশেষ পরিস্থিতি থেকে নিজেদের কীভাবে তারা বের করে আনবে তা কি চিহ্নিত করা হয়েছে? 

সাধারণ বিবেচনা

  • যে কর্মীদের মোতায়েন করা হচ্ছে তাদের সকলের এমার্জেন্সি যোগাযোগের তথ্য যথার্থভাবে রেকর্ড ও সংরক্ষণ করা হয়েছে কি?
  • সকল কর্মীদের নির্ভুল স্বীকৃতিপত্র, প্রেস পাস আছে কি? কিংবা আপনার সংস্থার হয়ে তারা কাজ করছে এমন ঘোষণাযুক্ত চিঠি? 
  • প্রতিবেদন করতে গিয়ে আপনার টিম যে ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে তার কথা বিবেচনা আপনি বিবেচনা করেছেন? সম্পাদকীয় লাভের সঙ্গে তুলনা করে এই ঝুঁকি কি মেনে নেওয়া যায়?
  • টিমের নির্ভুলভাবে বীমা করা আছে কি? পাশাপাশি যথাযথ মেডিকেল কভারের বন্দোবস্থ করা হয়েছে কি? 
  • কোনও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলে স্থানীয় মেডিকেল সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা কি করা হয়েছে? এই সুবিধার বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে দলের সদস্যদের জানানো হয়েছে কি?
  • সম্ভাব্য দীর্ঘ মেয়াদি ট্রমাঘটিত পীড়া সম্পর্কে কি আপনি বিবেচনা ও আলোচনা করেছেন?

 ঝুঁকির পরিমাণ ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য দেখুন সিপিজে রিসোর্স সেন্টার

২০২০ সালের ৬ নভেম্বরে তোলা এই আলোকচিত্রে ভারতের মুম্বইয়ে একজন ফোন ব্যবহারকারী ফেসবুকের হোয়াটঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটি নিজের মোবাইল ফোনে আপডেট করছেন। ( এএফপি / ইন্দ্রনীল মুখার্জি )

ডিজিটাল নিরাপত্তা : প্রাথমিক প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি

নির্বাচন কভার করার সময় রিপোর্টিং করার জন্য বা প্রতিবেদন ফাইল করতে এবং সহকর্মীদের ও সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়। যদি সাংবাদিকদের আটক করা হয় এবং তাদের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয় বা ভেঙে দেওয়া হয় তাহলে এর ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তাই অ্যাসাইনমেন্টের উদ্দেশে বেরনোর আগে কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখা ভালো :

  • আপনার ফোন বা কম্পিউটারে কী তথ্য আছে তা জেনে রাখুন এবং যদি আপনাকে আটক করা হয় এবং আপনার ফোন নিয়ে নেওয়া হয় এবং তল্লাশি চালানো হয় তাহলে এটা আপনাকে বা অন্যদের কীভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে তা জেনে রাখুন।
  • রিপোর্ট করতে বেরনোর আগে হার্ড ড্রাইভে আপনার ফোনের ব্যাক আপ রাখুন এবং স্পর্শকাতর বা ব্যক্তিগত তথ্য যেমন পারিবারিক ছবি প্রভৃতি সেগুলি আপনি যে ফোনটি নিয়ে ঘুরছেন সেখান থেকে সরিয়ে ফেলুন বা অ্যাকসেস সীমায়িত করে রাখুন।
  • রিপোর্ট করার সময় ব্যবহার করতে হবে না এমন অ্যাকাউন্টস ও অ্যাপস লগ আউট করে রাখুন এবং আপনার ফোন থেকে সেগুলি মুছে ফেলুন। ব্রাউজার থেকে লগ আউট করুন এবং ব্রাউজার হিস্টরি মুছে দিন। যদি আপনার ফোন বাজেয়াপ্ত করা  হয় এবং অনুসন্ধান করা হয় তাহলে এই ভাবে আপনার অ্যাকাউন্টস অ্যাকসেস করার হাত থেকে নিরাপত্তা বজায় রাখা যাবে।
  • আপনার সমস্ত ডিভাইসে পাসওয়ার্ড দিয়ে নিরাপদ রাখুন এবং রিপোর্ট করতে যাওয়ার আগে আপনার ডিভাইসে রিমোট ওয়াইপ সেট আপ করে দিন। শুধু মাত্র ইন্টারনেট যোগাযোগ থাকলেই রিমোট ওয়াইপ কাজ করতে সক্ষম। আপনার ফোন আনলক করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি যেমন আপনার আঙুলের ছাপ দেওয়া প্রভৃতি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। কারণ, এতে আপনার ডিভাইসে সহজে কেউ অ্যাকসেস করতে পারবে যদি আপনাকে আটক করা হয়।
  • যতটা কম ডিভাইস সঙ্গে নেওয়া যায় তত ভালো। যদি আপনার বিকল্প ডিভাইস থাকে তাহলে সেটা ব্যবহার করুন এবং আপনার ব্যক্তিগত বা কাজের ডিভাইস রেখে যান।
  • ·আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এনক্রিপশন চালু রাখার কথা মাথায় রাখুন। নতুন আইফোনে স্ট্যান্ডার্ড মেনে এনক্রিপশন আছে। এনক্রিপশন ব্যবহার করার সময় অনুগ্রহ করে আইনের বিষয়টি চেক করে নিন। 
  • সহকর্মী ও সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে যেখানে সম্ভব এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন মেসেজিং সার্ভিস যেমন সিগনাল ব্যবহার করুন। নির্দিষ্ট সময়কালের পর মেসেজ ডিলিট করে দিন।
  • যদি সাইট ব্লক করে দেওয়া হয় তাহলে ফোনে ভিপিএন ইনস্টল করে রাখুন ওই সাইটে অ্যাকসেস পেতে। ভিপিএন ব্যবহার করার সময় সেখানকার আইন সম্বন্ধে ভালো করে জেনে রাখুন এবং আংশিক ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার সময় কোন ভিপিএন প্রোভাইডার সব চেয়ে ভালো কাজ করেছে আগে সেই বিষয়ে অবগত থাকুন।
  • যদি পুরোপুরি ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় তাহলে কীভাবে ও কখন অন্যদের সঙ্গে সংযোগ করবেন সেই ব্যাপারে পরিকল্পনা করে রাখুন।
  • সিটিজেন ল্যাব ও সিপিজে ইন্টারভিউয়ের গবেষণা অনুযায়ী, এমনটা অভিযোগ রয়েছে যে, ভারতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পেগাসাস সহ স্পাইওয়্যার ক্যাম্পেনস করা হয়। সেই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। যদি একবার আপনার ফোনে ইনস্টল হয়ে যায়, তাহলে এই সূক্ষ্ম স্পাইওয়্যার আপনার এনক্রিপটেড মেসেজ সহ সমস্ত কার্যকলাপের উপর নজরদারি চালাবে। [ ইজরাইলকেন্দ্রিক এনএসও গ্রুপ জানিয়েছে যে, সরকার যাতে যথাযথ ভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারে সেই উদ্দেশে নজরদারির যন্ত্র হিসাবে পেগাসাসকে বাজারে আনা হয়েছে এবং সিপিজেকে বলা হয়েছে বারবার যে, এটা রিপোর্টগুলি তদন্ত করে দেখে যে চুক্তিভঙ্গ করে এর পণ্যের অপব্যবহার করা হয়েছে কিনা।  

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য অনুগ্রহ করে দেখুন সিপিজের ডিজিটাল সেফটি গাইড


ডিজিটাল নিরাপত্তা : উপাদান সংগ্রহ ও সঞ্চয়

নির্বাচনের সময় উপাদান সংগ্রহ করা ও সঞ্চয় করার ব্যাপারে যথার্থ নিয়ম মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনও সাংবাদিককে আটক করা হয়, তার ডিভাইজ নিয়ে নেওয়া হতে পারে এবং সেটা সার্চ করে দেখা হতে পারে। এতে সাংবাদিক ও তার সোর্সের জন্য মারাত্মক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। নির্বাচন কভার করতে গেলে ডিভাইস ভেঙে যেতে পারে বা চুরি হয়ে যেতে পারে। যদি না এর ব্যাক আপ নেওয়া না থাকে তাহলে প্রচুর তথ্য হারিয়ে যেতে পারে।

নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি আপনাকে ও আপনার তথ্যকে নিরাপত্তা দিতে সাহায্য করতে পারে:

  • ফোন ও কম্পিউটার সহ আপনার ডিভাইসে কী তথ্য সংরক্ষণ করা আছে তা মনোযোগ দিয়ে দেখে নিন। আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে এমন তথ্য বা স্পর্শকাতর কোনও তথ্য থাকলে তা ব্যাক আপ নিয়ে রাখা দরকার এবং তারপর মুছে ফেলা প্রয়োজন। মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধার করার জন্য অনেক পথ খোলা আছে। তাই, কোনও রকম স্পর্শকাতর তথ্য থাকলে তা নির্দিষ্ট কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে চিরস্থায়ী ভাবে মুছে ফেলা দরকার। শুধুমাত্র ডিলিট করলে চলবে না।
  • স্মার্টফোনে যখন কন্টেন্ট রিভিউ করছেন তখন আপনার ফোনের হার্ডওয়্যারে কী তথ্য আছে তা চেক করা উচিত। এর পাশাপাশি ক্লাউডে ( গুগল ফটোজ বা আইক্লাউড ) কী তথ্য সংরক্ষণ করা আছে তাও দেখা দরকার।
  • হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনগুলির কন্টেন্ট চেক করে নিন। বিপদে ফেলতে পারে এমন তথ্য সংরক্ষণ করে তারপর মুছে ফেলা উচিত সাংবাদিকদের। অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা ক্লাউড সার্ভিসে যেমন আইক্লাউড বা গুগল ড্রাইভে সমস্ত তথ্য ব্যাক আপ রাখে হোয়াটসঅ্যাপ। সেই বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
  • তথ্য কোথায় ব্যাক আপ রাখতে চান সেই ব্যাপারে ভাবুন। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনার তথ্য কোথায় বেশি সুরক্ষিত। ক্লাউডে নাকি এক্সাটার্নাল হার্ড ড্রাইভে নাকি ফ্ল্যাশ ড্রাইভে।
  • বিভিন্ন ডিভাইসে তথ্য সব সময় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখা দরকার সাংবাদিকদের এবং পছন্দের জায়গায় ব্যাক আপ অপশনে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, যদি আপনার ডিভাইস নিয়ে নেওয়া হয় বা চুরি যায় তাহলে আপনার কাছে তথ্যের কপি থাকছে।
  • যে তথ্যের আপনি ব্যাক আপ রাখছেন সেটা এনক্রিপ্ট করে রাখার ভাবনাটি ভালো। আপনার এক্সাটার্নাল হার্ড ড্রাইভ বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভকে এনক্রিপ্ট করার মাধ্যমে আপনি এক কাজটি করতে পারেন। আপনার ডিভাইসে এনক্রিপশন মোড টার্ন অন করেও রাখতে পারেন। যে দেশে কাজ করতে যাচ্ছেন সেখানে এনক্রিপশন বিষয়ে কী ধরনের আইন আছে সেটা সম্পর্ক ওয়াকিবহাল থাকা সাংবাদিকদের উচিত।
  • যদি আপনার সন্দেহ হয় যে আপনাকে নিশানা করা হতে পারে এবং কোনও বিরুদ্ধ পক্ষ এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ সহ আপনার ডিভাইস চুরি করে নিতে চায় তাহলে আপনার বাড়ির বদলে অন্য কোনও জায়গায় আপনার হার্ড ড্রাইভ রেখে দেওয়া উচিত।
  • আপনার সমস্ত ডিভাইসে পিন লক সেট করে রাখুন। পিন যত দীর্ঘ হবে, সেটা ক্র্যাক করা ততই কঠিন হয়ে উঠবে।
  • আগে থেকেই আপনার ফোন বা কম্পিউটারকে রিমোট ওয়াইপে সেট আপ করে রাখুন। এই পদ্ধতিতে আপনি ডিভাইসের তথ্য দূর থেকে মুছে ফেলার সুবিধা পাবেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি কর্তৃপক্ষ আপনার ডিভাইস নিয়ে নেয় তখন একে ব্যবহার করা যাবে। ইন্টারনেটের সঙ্গে ডিভাইসটি যুক্ত করা গেলে তবেই এই পদ্ধতি কাজ করবে।

 ডিজিটাল নিরাপত্তা: নিরাপদতর যোগাযোগ

নিরাপদ ভাবে অন্যদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ বজায় রাখা যায় তা জানাই হল আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশেষত, বহু সাংবাদিক কোভিড-১৯-এর জন্য দূর দূরান্তে গিয়ে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করছেন। ব্যক্তিগত ভাবে আলোচনার পরিবর্তে সাংবাদিক ও সম্পাদকরা বহুলাংশে কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করছেন এবং কর্মী ও সোর্সদের নিরাপত্তার জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এই ব্যাপারে এই কল ও ওয়েবিনারগুলি অ্যাকসেস করা খুবই জরুরি।

  • যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে সুনিশ্চিত করুন যে, আপনার অ্যাকাউন্ট দীর্ঘ ও ইউনিক পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনি সুরক্ষিত করেছেন এবং দুই ধাপের ভেরিফিকেশন টার্ন অন করা আছে কিনা দেখে নিন।
  • যদি আপনি পারেন তাহলে অনলাইন কনফারেন্সিং অ্যাকাউন্টে আপনার ব্যক্তিগত ইমেইলের পরিবর্তে কাজের ইমেইল দিয়ে সাইন আপ করুন। এর ফলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। ব্যক্তিগত তথ্য যেমন কন্ট্যাক্ট তালিকা কেউ জানতে পারবে না। অনলাইন কনফারেন্সিং সার্ভিস নয় বা অন্যান্য যারা এই কনফারেন্সে যোগদান করছেন, তারা।
  • যদি না পাবলিক ইভেন্ট হয় তাহলে অনলাইন কনফারেন্সিং ইভেন্টের তথ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ করবেন না। এই ইভেন্টে কারা যোগ দান করছেন তার উপর আপনার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
  • কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম সার্ভিসের সাম্প্রতিকতম ভার্সনটি ব্যবহার করছেন কিনা সেই বিষয়ে সুনিশ্চিত হয়ে নিন।
  • যদি আপনি অল্প সংখ্যক অর্থাৎ ১০ জনেরও কম লোকের সঙ্গে ভিডিওতে কথা বলার দরকার হয় আপনার তাহলে হোয়াটসঅ্যাপ বা সিগনাল ব্যবহার করাই উত্তম।

যদি জুম ব্যবহার করা হয় :

যখন জুম ব্যবহার করছেন তখন নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে নিম্নলিখিত নির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হল:

  • প্রত্যেক ইউজারের জন্য জুম যে ব্যক্তিগত আইডি নম্বরটি তৈরি করে সেটা সবাইকে জানানো আপনার উচিত নয় ; উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা আপনি পোস্ট করবেন না।
  • আপনার মিটিং অ্যাকসেস করতে নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড সেট আপ করুন।
  • ওয়েটিং রুম ফাংসনকে চালু করে দিন। এই পদ্ধতিটি সুনিশ্চিত করে যে, কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিরাই আপনার ইভেন্টে যোগ দিতে পারবেন যাদের আপনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কারা অপেক্ষা করছে তা আপনি দেখতেও পাবেন এবং যে কাউকে আপনি সরিয়ে দিতে পারবেন অর্থাৎ যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বা যারা অপরিচিত তাদের সরিয়ে দেওয়া যায়।
  • সকল আমন্ত্রিতরা হাজির হয়ে গেলে মিটিং রুম আপনি লক করে দিন।
  • ভিডিও ও শব্দ টার্ন অফ করে আপনি অংশগ্রহণকারীদের পরিচালনা করতে পারেন রুমে এবং কারা স্ক্রিন শেয়ার করতে পারবেন তাও আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
  • জুম কল থেকে যে কোনও সময় যে কাউকে আপনি সরিয়ে দিতে পারেন এবং রুমে যাতে ফিরে আসতে না পারে সে জন্য ব্লকও করে দিতে পারেন।
  • এই বিষয়টি নিশ্চিত করুন যে, আপনি জুমের সাম্প্রতিকতম ভার্সনটি ব্যবহার করছেন এবং এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন মোড চালু করেছেন কিনা দেখে নিন।

 ডিজিটাল নিরাপত্তা : অনলাইন হয়রানি, ট্রোলিং ও ভুল তথ্য দিয়ে প্রচার

নির্বাচনের সময় নিশানা করে অনলাইন প্রচার সহ অনলাইন হেনস্থা ও হয়রানি বাড়তে পারে। গণমাধ্যম কর্মীরা প্রায়ই অনলাইন আক্রমণকারীদের দ্বারা নিশানা হয়। এই অনলাইন আক্রমণকারীরা সাংবাদিক ও তাদের কাজের মর্যাদাহানি করতে চায়। এমনকি এটাও প্রায় ঘটে যে, অনেকে মিলে হয়রান করা ও ভুল তথ্য দিয়ে প্রচার করা। যার ফলে সাংবাদিক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে অপারগ হয়ে পড়ে এবং জরুরি ভিত্তিতে অফলাইনে চলে যেতে বাধ্য হয়। এই ভাবে ভারতে অনলাইনে বহু মহিলা সাংবাদিককে ট্রোল ও হেনস্থা করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা সম্পর্কে সিপিজে ওয়াকিবহাল। অনলাইন আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা সহজ কাজ নয়। যাইহোক, কয়েকটি ধাপ রয়েছে যেগুলি মেনে চললে সাংবাদিকরা নিজেদের অ্যাকাউন্ট ও নিজেদেরকে আরও ভালো ভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারবে।

নিজেকে ভালো ভাবে সুরক্ষিত রাখা :

অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা

আপনাকে নিশানা ও হেনস্থা করতে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইন হেনস্থাকারীরা প্রায়ই ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করবে। আপনার অ্যাকাউন্ট ও আপনার তথ্য আরও ভালো ভাবে সুরক্ষিত রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করুন।

  • আপনার অ্যাকাউন্টের জন্য দীর্ঘ ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। এগুলি ১৬ ক্যারেক্টার বা তারও বেশি হওয়া উচিত এবং প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য ইউনিক হওয়া উচিত। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করুন যা সাম্প্রতিক কালে পাসওয়ার্ড ম্যানেজ করতে সব চেয়ে নিরাপদ পথ। অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করতে এটা সাহায্য করবে।
  • অ্যাকাউন্টের জন্য টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ( ২এফএ ) চালু করুন।
  • প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আপনার প্রাইভেসি সেটিং পুনরায় দেখে নিন। কোনও রকম ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ফোন নম্বর ও জন্ম তারিখ প্রভৃতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে সুনিশ্চিত হয়ে নিন। সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যে কাদের অ্যাকসেস আছে সেটা চেক করে নিন এবং প্রাইভেসি সেটিং-কে আরও মজবুত করে নিন।
  • আপনার অ্যাকাউন্ট খুঁটিয়ে দেখে নিন এবং এমন কোনও ছবি বা ইমেজ সরিয়ে ফেলুন যা ভ্রান্ত ভাবে ব্যবহার করে অপপ্রচার করা যেতে পারে এবং আপনার সম্মানহানি করার জন্য যা ব্যবহার করা হতে পারে। এটা ট্রোলদের খুবই পরিচিত ও সাধারণ কৌশল।
  • অতিরিক্ত ট্রোলিং ক্রিয়াকলাপ ও ইঙ্গিতের কোনও লক্ষণ দেখলে আপনার অ্যাকাউন্টের দিকে নজর রাখুন। ডিজিটাল হুমকি শেষ পর্যন্ত শারীরিক হুমকিকে পরিণত হতে পারে। এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন, নির্দিষ্ট কিছু প্রতিবেদনের কারণে হেনস্থার পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • অনলাইন হেনস্থার ব্যাপারে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন। সাংবাদিকদের আত্মীয়দের ও সামাজিক বৃত্তে থাকা মানুষদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রোলরা প্রায়শই তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। আপনার ছবি পরিচিত জনদের সাইট থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করার কথা বিবেচনা করে দেখুন অথবা তাদের অ্যাকাউন্টগুলি লক ডাউন করে দিন।
  • অনলাইন হেনস্থার বিষয়ে আপনার মিডিয়া আউটলেটের সঙ্গে কথা বলুন এবং যদি ট্রোলিং গুরুতর আকার ধারণ করে তাহলে কী পদক্ষেপ নেবেন তা আগাম ভেবে রাখুন।

আক্রমণের সময়: 

  • অনলাইন হেনস্থাকারীদের সঙ্গে না জড়ানোর চেষ্টা করবেন কারণ এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে।
  • আক্রমণের পিছনে কারা আছে ও তাদের উদ্দেশ্য কী সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত কোনও প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে এই অনলাইন আক্রমণ হতে পারে।
  • কোনও অবমাননাকর ও হুমকিমূলক আচরণের ঘটনা ঘটলে তা সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাকে রিপোর্ট করা উচিত সাংবাদিকদের।
  • উদ্বেগজনক কোনও মন্তব্য ও ছবি সংরক্ষণ করুন। ট্রোলের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল, তারিখ, সময় ও ট্রোলিং -এর স্ক্রিনশট তুলে রাখুন। পরে যদি আপনার সংবাদ সংস্থা, সম্পাদক, সংগঠনকে দেখানোর প্রয়োজন পড়ে যারা বাক স্বাধীনতার সপক্ষে লড়াই করেন বা কোনও কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হয় এগুলি।
  • হ্যাকিং-এর কোনও ইঙ্গিত পেলে নজর রাখুন। প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য শক্তিশালী ও দীর্ঘ পাসওয়ার্ড রয়েছে কিনা সে বিষয়ে সুনিশ্চিত থাকুন এবং টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন অন আছে কিনা খেয়াল রাখুন।
  • আপনার পরিবার, কর্মীদের ও বন্ধুদের জানান যে আপনাকে অনলাইনে হেনস্থা করা হচ্ছে। আপনার সম্মানহানি করার জন্য বিরুদ্ধ পক্ষ প্রায়ই আপনার পরিবারের সদস্যদের ও আপনার কাজের জায়গায় যোগাযোগ করবে এবং তাদের কাছে তথ্য / ছবি পাঠাবে।
  • যারা আপনাকে অনলাইনে হেনস্থা করছে তাদের আপনি ব্লক বা মিউট করে দিতে চাইতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থার কাছে অবমাননাকর বিষয় সম্পর্কে আপনার রিপোর্ট করা উচিত এবং এই সংস্থাগুলির সঙ্গে আপনার যোগাযোগের রেকর্ড রাখা উচিত।
  • আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের কমেন্ট বিভাগকে পর্যবেক্ষণে রাখুন। সেখান থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে যে অনলাইন হুমকি শারীরিক হুমকির দিকে মোড় নিচ্ছে কিনা। আপনার ঠিকানা অনলাইনে পোস্ট করে অন্য লোকেদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে ( ডক্সিং নামে পরিচিত ) এবং আপনাকে আক্রমণ করার জন্য অন্যদের আহ্বান জানাতে পারে এবং / অথবা নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে অতিরিক্ত হেনস্থা হতে পারে।
  • যে পর্যন্ত না হেনস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ অফলাইন থাকার কথা বিবেচনা করে দেখুন।
  • অনলাইন হেনস্থা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা অভিজ্ঞতা হতে পারে। আপনাকে সহযোগিতা করতে আপনার সাপোর্ট নেটওয়ার্ক আছে কিনা সে বিষয়ে সুনিশ্চিত হন। এমন ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক নয় যে, এরা আপনার কর্মচারীকেও জড়িয়ে ফেলল। 
নয়া দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট করছেন সাংবাদিক বরখা দত্ত (সি)। ২০২০ সালের ১২ জুনে। সংক্রামক কোভিড-১৯-এর জন্য চাপানো বিধি নিষেধ কর্তৃপক্ষ শিথিল করে দেওয়ার পর।

শারীরিক নিরাপত্তা : কোভিড-১৯ বিষয়ক বিবেচনা

কোনও নির্বাচনী ইভেন্টে বা এই সম্পর্কিত প্রতিবাদ আন্দোলনে শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে চলা খুবই কষ্টসাধ্য। বিশাল ভিড় খুবই সাধারণ ব্যাপার। সাধারণ জনগণ মুখের আবরণী / ফেস মাস্ক নাও পরতে পারে এবং একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে ঠাসাঠাসি করে মিডিয়া কর্মীদের আবদ্ধ থাকতে হতে পারে। এই ধরনের বদ্ধ হয়ে থাকার ফলে ভাইরাসের ড্রপলেট ছড়িয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এরই পাশাপাশি বিরূপ মনোভাবাপন্ন জনতা মৌখিক বা শারীরিক ভাবে আক্রমণ করতে পারে। তারা ইচ্ছা করেই মিডিয়া কর্মীদের উপর হেঁচে ও কেশে দিতে পারে।

সতর্ক থাকুন যে, চিৎকার করা বা হল্লা করা মানুষদের থেকে ভাইরাসের ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা ও সম্ভাবনা মিডিয়া কর্মীদের ক্ষেত্রে বেড়ে যাচ্ছে।

  • প্রতিটি রাজ্যের সাপেক্ষে ভারতে জনসমাবেশের উপর কোভিড-১৯-এর উপর বিধি নিষেধ বদলে যায় এবং খুব কম সময়ের নোটিসে বা কোনও রকম নোটিস ছাড়াই তা বদলে যেতে পারে। সব সময় এলাকার বিধি নিষেধের দিকে খেয়াল রাখুন। মাথায় রাখুন যে, ২০২০ সালে বিধি নিষেধ লঙ্ঘন করার অভিযোগে বহু সাংবাদিককে আক্রমণ করা হয়েছিল বা পুলিশ আটক করেছিল। 
  • যদি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যাত্রা করেন বা অন্য রাজ্য থেকে নির্বাচন কভার করতে যান তাহলে সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ পরীক্ষা হয়েছে কিনা তার প্রমাণ দেখানোর প্রয়োজন পড়তে পারে, এবং / অথবা অকুস্থলে পৌঁছে কোয়ারান্টাইনে থাকতে হতে পারে। রাজ্যভিত্তিক জরুরি একটি নির্দেশিকা এখানে পাওয়া যেতে পারে। 
  • কোনও ভিড়ে ভরা ইভেন্টে বা আন্দোলনে একটি ভালো মানের ফেস মাস্ক ব্যবহার করা অত্যান্ত জরুরি ( যেমন এন৯৫ / এফএফপি২ স্ট্যান্ডার্ড বা আরও উচ্চ মানের )। ফেস মাস্ক না পরার জন্য কর্তৃপক্ষ জরিমানা করতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন। 
  • গোটা অ্যাসাইনমেন্ট চলা কালে যতটা সম্ভব নিয়মিত, পুরোপুরি ও যথাযথ ভাবে আপনার হাত ধোয়া হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। সঠিক উপায়ে হাত শুকানো হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন। যদি আপনার হাত ধুতে না পারেন তাহলে নিয়মিত অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। কিন্তু নিয়মিত হাত ধোয়ার রুটিনের বিকল্প করে তুলবেন না একে। 
  • পুনরায় আপনার বাড়িতে প্রবেশ করার আগে সমস্ত কাপড় ও জুতো খুলে ফেলা উচিত এবং গরম জল ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ধোয়া / পরিষ্কার করা উচিত, যেখানে সম্ভব। 
  • অ্যাসাইনমেন্টের পর সমস্ত সরঞ্জাম আগাগোড়া পরিষ্কার করা উচিত।

আরও বিস্তারিত কোভিড-১৯ রিপোর্টিং নির্দেশনার জন্য অনুগ্রহ করে দেখুন সিপিজের নিরাপত্তা বিধি, এখানে

ভারতের কলকাতায় বামপন্থী ছাত্র দলের নেতৃত্বে চলা মিছিলে পুলিশের অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে কংগ্রেস দলের সমর্থকরা। ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে। ( এপি / বিকাশ দাস )

শারীরিক নিরাপত্তা : নির্বাচনী মিছিল ও আন্দোলন থেকে রিপোর্টিং

নির্বাচনের সময়, ভিড়ে ঠাসা মিছিল, প্রচার অনুষ্ঠান, লাইভ ব্রডকাস্ট ও আন্দোলনে প্রায়শই যান মিডিয়া কর্মীরা। এই ধরনের ইভেন্টে ঝুঁকি কমাতে মিডিয়া কর্মীদের নিম্নলিখিত নিরাপত্তামূলক পরামর্শগুলি বিবেচনায় রাখা উচিত: 

রাজনৈতিক সভা ও মিছিল

  • সুনিশ্চিত করুন যে, আপনার কাছে যথাযথ স্বীকৃতিপত্র বা প্রেসের পরিচয়পত্র আছে। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কমিশনিং এমপ্লয়ারের কাছ থেকে চিঠি নেওয়া থাকলে তা সাহায্য করবে। যদি নিরাপদ মনে হয় তাহলে এটা সামনে রাখুন। আপনার গলার কাছে লেনিয়ার্ড ব্যবহার করা এড়িয়া যান, কিন্তু বেল্টে এটাকে ক্লিপ করে আটকে রাখুন অথবা তার পরিবর্তে আপনার বাহুর কাছে স্বচ্ছ ভেলক্রো পাউচে একে রাখুন। 
  • মিডিয়া সংস্থার ব্র্যান্ডিং ছাড়া কাপড় পরিধান করুন এবং প্রয়োজন পড়লে সরঞ্জাম / গাড়ি থেকে মিডিয়ার লোগো সরিয়ে ফেলুন। 
  • স্যান্ডেল বা স্লিপ-অন জুতো পরিধান করা এড়িয়ে চলুন। তার পরিবর্তে শক্ত সোলওয়ালা, ফিতে দেওয়া ও গোড়ালিতে সাপোর্ট আছে এমন ধরনের মজবুত জুতো পরিধান করুন। 
  • সহজে বের করা যায় এমন জায়গার দিকে মুখ করে নিরাপদ পরিসরে গাড়ি পার্ক করুন অথবা সুনিশ্চিত করুন যে, আপনার বিকল্প নির্ভরযোগ্য পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। 
  • পরিস্থিতি যদি বিরূপ আকার ধারণ করে তাহলে বেরিয়ে আসার কৌশল ঠিক করে রাখুন। অকুস্থলে হাজির হয়েই এই পরিকল্পনা করে রাখার প্রয়োজন হতে পারে আপনার। কিন্তু আগেই এটা করার চেষ্টা করুন। অকুস্থল থেকে প্রস্থানের সব রকম পথ সম্পর্কে আগে চিহ্নিত করে রাখুন। 
  • জনতার মনোভাব বুঝে নিন। যদি সম্ভব হয়, অন্য সাংবাদিকদের ইভেন্টে আগেই ডেকে নিন জনতার মনোভাব বোঝার জন্য। অন্য রিপোর্টার বা চিত্রসাংবাদিকের সঙ্গে যাওয়ার কথা বিবেচনা করে দেখুন, যদি প্রয়োজন পড়ে। 
  • ইভেন্টের মধ্যে প্রেসের জন্য বরাদ্দ জায়গা থেকে রিপোর্ট করুন যদি না অন্যভাবে রিপোর্ট করা নিরাপদ মনে হয়। যদি আপনি সমস্যায় পড়েন তাহলে নিরাপত্তা রক্ষী বা পুলিশ সাহায্য করবে কিনা সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করুন। 
  • যদি জনতা / বক্তারা মিডিয়ার বিরুদ্ধে যায় তাহলে মৌখিক অসম্মানের জন্য নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে রাখুন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, নিজের কাজটুকু ও রিপোর্ট করে যান শুধু। এই অসম্মানে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। জনতার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বেন না। স্মরণে রাখুন, অন্যরা না হলেও আপনি একজন পেশাদার। 
  • যদি জনতার দিক থেকে থুতু বা অন্য কিছু উড়ে আসার সম্ভাবনা থাকে এবং আপনি রিপোর্ট করতে বদ্ধপরিকর হন তাহলে হুড দেওয়া, জল নিরোধক ও পৃথক বাম্প টুপি পরিধান করার কথা বিবেচনা করে দেখুন। 
  • যদি পরিস্থিতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে তাহলে অকুস্থল / ইভেন্টের বাইরে ঘোরাঘুরি করা এড়িয়ে যান এবং মানুষকে প্রশ্ন করতে শুরু করবেন না। 
  • জায়গার বাইরে থেকে রিপোর্ট করাই যদি উদ্দেশ্য হয় তাহলে সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করা বুদ্ধিমানের হবে। এমন নিরাপদ জায়গা থেকে রিপোর্ট করুন যেখানে উপযুক্ত প্রস্থান পথ রয়েছে এবং আপনার যাওয়ার রুটের সঙ্গে নিজেকে ভালো ভাবে পরিচয় করে রাখুন ও জেনে রাখুন। যদি নিগ্রহের ঘটনা অবশ্যম্ভাবী হয় তাহলে নিরাপত্তা রক্ষীর প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে দেখুন এবং কাজের ক্ষেত্রে কম সময় কাটান। 
  • যদি কাজ কঠিন / চ্যালেঞ্জিং হয় তাহলে নিজের অনুভূতিকে আটকে রাখবেন না। আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তাদের ও সহকর্মীদের বলুন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, তারা প্রস্তুত এবং প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছ থেকে শেখে। 

আন্দোলন  

পরিকল্পনা: 

  • অতীতে সারা ভারত জুড়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার করেছে গুলি, রবার বুলেট, পেলেট গান, কাঁদানে গ্যাস, লাঠি স্টিক ও রুল বাড়ি। যদি হিংসার ঘটনা আঁচ করা যায় তাহলে নিরাপত্তামূলক সেফটি গগলস / চশমা, হেলমেট, কাঁদানে গ্যাস রেসপিরেটর ও শরীর ঢাকা ভেস্ট ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য দেখুন সিপিজের পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) নির্দেশিকা, এখানে। 
  • যে এলাকায় যাচ্ছেন সেই এলাকার লেআউট সম্পর্কে আগে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে রাখুন। এমার্জেন্সির সময় আপনি কী করবেন সেই ব্যাপারে আগে থেকে ছক তৈরি করে রাখুন এবং বেরিয়ে আসার সকল সম্ভাব্য নিরাপদ রুট সম্পর্কে অবগত থাকুন। 
  • আন্দোলনের জায়গায় একক ব্যক্তির কাজ করতে যাওয়া উচিত নয়। সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করুন এবং আপনার বেস, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য চেক-ইন পদ্ধতি সেট করুন। অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পর কাজ করা বেশি ঝুঁকির এবং যদি সম্ভব হয় তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য অনুগ্রহ করে দেখুন সিপিজের একাকী রিপোর্টিং করা সাংবাদিকদের জন্য পরামর্শ। 
  • যদি মেডিকেল কীভাবে ব্যবহার করতে হয় জানেন তাহলে তা সঙ্গে রাখুন এবং আপনার মোবাইল ফোনে পরিপূর্ণ ব্যাটারি আছে কিনা সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করুন। 
  • ঢিলেঢালা পোশাক, রাজনৈতিক স্লোগান, মিডিয়া ব্র্যান্ডিং, মিলিটারি প্যাটার্ন, রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত রঙ ও আগুন লাগতে পারে এমন উপাদানের ( যেমন নাইলন ) পোশাক পরিধান করা এড়িয়ে চলুন। 
  • শক্ত সোলযুক্ত, ফিতে দেওয়া ও গোড়ালিতে সাপোর্ট দেয় এমন জুতো পরিধান করুন। 
  • পিছন থেকে আপনাকে কেউ যাতে টানতে না পারে তাই লম্বা চুল বেঁধে নিন। 
  • আপনার সঙ্গে রাখা দামি জিনিসপত্রের সংখ্যা কমিয়ে দিন। গাড়িতে কোনও সরঞ্জাম ফেলে আসবেন না। এগুলি ভেঙে ফেলা হতে পারে। অন্ধকারের পর অপরাধীদের দ্বারা বিপদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

সতর্কতা ও অবস্থান: 

  • সব সময় আপনার অবস্থান খেয়ালে রাখুন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্কতা বজায় রাখুন। যদি সম্ভব হয়, উঁচু কোনও জায়গা সন্ধান করুন যেটা আপনাকে আরও বেশি সুরক্ষা দিতে পারে। 
  • আপনি যদি অন্যদের সঙ্গে কাজ করেন তাহলে সব সময় বেরিয়ে যাওয়ার রুটের কথা মাথায় রাখুন। এর পাশাপাশি এমার্জেন্সি রঁদেভু পয়েন্টের কথাও পরিকল্পনায় রাখুন। 
  • মেডিকেল সহযোগিতার নিকটবর্তী কেন্দ্রবিন্দুকে চিহ্নিত করে রাখুন। 
  • যদি ভিড়ের মধ্যে কাজ করেন তাহলে কৌশল অবলম্বন করুন। ভিড়ের বাইরে থাকার চেষ্টা করুন এবং ভিড়ের মাঝখানে আটকে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। 
  • জনতার চলাফেরা ও ডাইনামিকস বুঝতে কর্তৃপক্ষের মনোভাব ও আচরণ সব সময় বোঝা ও পর্যবেক্ষণ করুন। জনতা যদি উগ্র হয়ে পড়ে তাহলে পুলিশ আগ্রাসী হয়ে হয়ে উঠতে পারে ( কিংবা এর বিপরীতটা )। বিভিন্ন দৃশ্য যেমন পুলিশের পোশাক পরিধান করা দাঙ্গাবাজ বা ইঁট পাটকেল ছোঁড়া থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে আগ্রাসনের মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। নিরাপদ জায়গায় ফিরে আসুন অথবা যখন ‘লাল পতাকা’র মতো কিছু নজরে আসবে তখন দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা করুন। 
  • চিত্র সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে অকুস্থলে ভিড়ের মধ্যে গিয়ে কাজ করতে হয় তাই তাদের ঝঁকির পরিমান বেশি। চিত্র সাংবাদিকদের পিছন থেকে লক্ষ রাখার মতো এমন কারো থাকা উচিত এবং প্রত্যেক মুহূর্তে তাদের ভিউফাইন্ডার থেকে নজর রাখার ব্যাপারটি স্মরণে রাখা উচিত। শ্বাসরোধ এড়াতে আপনার গলার চারধারে ক্যামেরার ফিতে পরবেন না। দূর থেকে কাজ করার সুবিধা প্রায়শই চিত্র সাংবাদিকদের থাকে না, তাই ভিড়ের মধ্যে যত কম সময় কাটানো যায় তত ভালো। আপনার প্রয়োজনীয় ছবি তুলুন এবং বেরিয়ে আসুন। 
  • জনতা তাদের স্বাগত জানাবে না, এই বিষয় সম্পর্কে সকল সাংবাদিককে সচেতন থাকতে হবে। এটা দ্রুত বিরূপ আকার ধারণ করতে পারে। 
ভারতের গুয়াহাটিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতায় আন্দোলনরত প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করছে পুলিশ। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে। ( এপি / অনুপম নাথ )

যদি পুলিশের দ্বারা কাঁদানে গ্যাস ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে

কাঁদানে গ্যাস ব্যবহারের ফলে হাঁচি, কাশি, থুতু, কান্না ও মিউকাস তৈরি হতে পারে যার ফলে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু ক্ষেত্রে, কেউ বমি করতে পারে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। এই ধরনের উপসর্গ মিডিয়া কর্মীদের বাতাসে ভাসমান ভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। অ্যাসথামার মতো শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় যারা ভুগছেন এবং যারা কোভিড-১৯ দুর্বলতা বিভাগে তালিকাভুক্ত তাদের ভিড়ে ঠাসা ইভেন্ট ও আন্দোলন কভার করতে না যাওয়া উচিত এবং কাঁদানে গ্যাস যদি ব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেই ইভেন্ট এড়িয়ে চলা উচিত। 

পাশাপাশি, প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে, করোনাভাইরাসের মতো প্যাথোজেনের সংক্রমণের পরিমাণ প্রকৃত পক্ষে বাড়িয়ে দিতে পারে কাঁদানে গ্যাস, এমনটাই আলোকপাত করেছে এনপিআর

কাঁদানে গ্যাসের সংস্পর্শে আসা ও তার ফলাফল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত নির্দেশিকার জন্য অনুগ্রহ করে দেখুন সিপিজের গণ বিশৃঙ্খলা নির্দেশিকা। 

শারীরিক নিগ্রহ: 

ভারতে আন্দোলনকারীরা আগে সাংবাদিকদের নিগ্রহ করেছে। যখন আগ্রাসী পরিস্থিতি ডিল করবেন তখন নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনায় রাখুন: 

  • ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করার আগে সাংবাদিকদের সম্বন্ধে আন্দোলনকারীদের মনোভাব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং সম্ভাব্য আক্রমণকারীর দিকে সতর্কতা বজায় রাখুন। 
  • উগ্রতাবাদীকে চিহ্নিত করতে শরীরী ভাষা পড়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং পরিস্থিতিকে শান্ত করতে আপনার নিজের শরীরী ভাষা প্রয়োগ করুন। 
  • উগ্রতাবাদীদের চোখে চোখে রাখুন। খোলামেলা ভঙ্গিতে থাকুন এবং খুব শান্ত ভঙ্গিতে কথা চালিয়ে যান। 
  • বিপদ থেকে এক হাত দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। যদি আগ্রাসন শুরু হয় তাহলে পিছিয়ে আসুন ও আগ্রাসী না হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসুন। যদি কোণঠাসা হয়ে পড়েন ও বিপদে আটকে পড়েন তাহলে চিৎকার করুন। 
  • যদি আগ্রাসন বৃদ্ধি পায় তাহলে একটা হাত খালি রাখুন আপনার মাথা বাঁচানোর জন্য এবং ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে যান, পড়ে যাওয়া এড়াতে। যদি আপনি দলে থাকেন তাহলে এক সঙ্গে থাকুন এবং হাতে হাত রেখে সংযুক্ত থাকুন। 
  • এমন সময় আসে যখন আগ্রাসনকে ডকুমেন্ট করা জরুরি সাংবাদিকতার কাজ তখন পরিস্থতি সম্পর্কে ও নিজের নিরাপত্তা বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কোনও আগ্রাসী ব্যক্তির ছবি তোলায় পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে। 
  • যদি আপনাকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাহলে আক্রমণকারী যা চায় তা দিয়ে দিন। সরঞ্জাম আপনার জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান নয়। 

শারীরিক নিরাপত্তা: বিরূপ মনোভাবাপন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে রিপোর্টিং

মিডিয়া বা বহিরাগতদের প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন এলাকা বা সম্প্রদায়ের মধ্যে গিয়ে অনেক সময় সাংবাদিকদের রিপোর্টিং করার প্রয়োজন পড়ে। এটা ঘটতে পারে যদি ওই সম্প্রদায় মনে করে যে মিডিয়া নিরপেক্ষ ভাবে তাদের কথা তুলে ধরে না বা তাদের নেতিবাচক ভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে। নির্বাচনী প্রচারের সময়, মিডিয়ার প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হতে পারে সাংবাদিকদের। 

বিপদ কমাতে: 

  • যদি সম্ভব হয়, আগে থেকে ওই সম্প্রদায় ও তাদের মনোভাব সম্পর্কে গবেষণা করে নিন। মিডিয়ার প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা উপলব্ধি করুন। এবং যদি প্রয়োজন হয় তাহলে লো প্রোফাইল বজায় রাখুন। 
  • সম্প্রদায়ের সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। আমন্ত্রণ ছাড়া কোথাও হাজির হওয়া অথবা আপনাকে কেউ ডেকে নিয়ে গেলে আপনি সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারেন। যদি এলাকার সঙ্গে আপনার পরিচয় না থাকে বা আপনাকে একজন বহিরাগত হিসাবে মনে করা হয় তাহলে স্থানীয় সহযোগি, সম্প্রদায়ের সম্মানীয় নেতা বা ব্যক্তিকে সঙ্গে নেওয়ার কথা বিবেচনায় রাখুন যারা আপনাকে সঙ্গ দিতে পারে এবং আপনার কাজে সমন্বয় সাধন করতে পারে। স্থানীয় ক্ষমতাধর কাউকে চিহ্নিত করুন যে এমার্জেন্সির সময় আপনাকে সাহায্য করতে পারে। 
  • যদি সম্প্রদায়ের মধ্যে অ্যালকোহল বা ড্রাগের অত্যাধিক ব্যবহার থাকে তাহলে সতর্ক থাকুন যে, অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনা বেড়ে যায়। 
  • আদর্শগতভাবে, দলবদ্ধ হয়ে বা ব্যাক আপ নিয়ে কাজ করুন। বিপদের মাত্রা অনুযায়ী ব্যাক আপ কাছের কোনও জায়গায় অপেক্ষায় থাকতে পারে ( শপিং মল বা পেট্রোল স্টেশন ) যাতে প্রয়োজন পড়লে তারা কাজে আসে। 
  • এলাকার ভূগোল সম্বন্ধে ভেবে নিন এবং সেই ভাবে পরিকল্পনা করুন। যদি বিপদ বেশি থাকে তাহলে নিরাপত্তার প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রাখুন। আপনি যখন কাজে ব্যস্ত তখন বেড়ে যাওয়া বিপদের হাত থেকে আপনাকে ও আপনার কিটকে রক্ষা করতে পারে স্থানীয় ভাড়া করা কোনও দেখভাল করার লোক। 
    • যাওয়ার জন্য প্রস্তুত অবস্থায় আপনার গাড়িকে পার্ক করুন। সবচেয়ে ভালো হয় গাড়িতে যদি চালক    থাকে। 
    •  যদি আপনাকে আপনার গাড়ি থেকে দূরে গিয়ে কাজ করতে হয় তাহলে জেনে রাখুন কীভাবে সেটার কাছে ফিরে আসবেন। কোনও ল্যান্ডমার্ক থাকলে তা চিহ্নিত করুন এবং এই তথ্য সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করে নিন। 
    • মেডিকেল এমার্জেন্সি দেখা দিলে কোথায় যেতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নিন এবং বেরিয়ে আসার কৌশল সম্বন্ধে ভেবে রাখুন। 
  • কোনও ব্যক্তির ভিডিও করা / ছবি তোলার আগে তার সম্মতি চেয়ে নিন। বিশেষত যদি আপনার সহজে বেরিয়ে আসার পথ না থাকে। 
  • যে কন্টেন্ট প্রয়োজন তা যদি আপনার নেওয়া হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে বেরিয়ে আসুন এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ঘোরাফেরা করবেন না। পূর্ব-সম্মত কাট অফ টাইম থাকলে খুব ভালো হয় এবং সেই নির্দিষ্ট সময়ে বেরিয়ে পড়া যায়। যদি দলের কোনও সদস্য অস্বস্তি বোধ করেন তাহলে আলোচনা করে সময় নষ্ট করবেন না। সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা ত্যাগ করুন। 
  • মিডিয়া সংস্থার ব্র্যান্ডিং নেই এমন পোশাক পরিধান করুন। এই পোশাক যথাযথ ও মর্যাদাসম্মত হওয়া উচিত। যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে সরঞ্জাম / গাড়ি থেকে মিডিয়ার লোগো সরিয়ে ফেলুন। 
  • মেডিকেল কিট কীভাবে ব্যবহার করতে হয় যদি জানেন তাহলে তা সঙ্গে নিন। 
  • প্রতিটি ব্যক্তি ও তাদের বিশ্বাস / উদ্বেগের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল হোন।
  • মূল্যবান জিনিস / নগদ অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দিন। আপনাদের সরঞ্জাম দেখে চোরেরা কি আকর্ষণ বোধ করবে? যদি আপনাকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাহলে তারা যা চায় তা দিয়ে দিন। সরঞ্জাম আপনার জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান নয়। 
  • রাতে কাজ করা এড়িয়ে চলুন। নাটকীয়ভাবে ঝুঁকি বেড়ে যায়। 
  • সম্প্রচার / প্রকাশনার আগে মাথায় রাখুন যে আপনাকে সেই জায়গায় ফিরতে হতে পারে। যদি আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার কভারেজ কি আপনাকে বিড়ম্বনায় ফেলবে?