১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের ঢাকার একটি রাস্তায় প্রদর্শিত স্থানীয় সংবাদপত্র পড়ছেন পথচারীরা। (এএফপি/মুনির উজ জামান)

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ২০২৪: সাংবাদিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নির্দেশিকা 

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। নির্বাচনের সম্ভাব্য বৈধতা সংক্রান্ত নানা রকম প্রশ্নের মধ্যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এবং দলগুলোর ভেতরে সংঘর্ষের প্রবণতা এরই মধ্যে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এবং সাংবাদিকেরা প্রায়ই এসব সংঘর্ষের মাঝামাঝিতে পড়ে যাচ্ছেন। সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কায় নির্বাচনের আগ দিয়ে, বিপুল পরিমাণ শটগান বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও স্নাইপার রাইফেল কিনেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

সিপিজে’র গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দুর্ভাগ্যবশত একটি সাধারণ ঘটনা, বিশেষ করে যারা রাজনীতি বা নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়গুলো কাভার করেন। ২০২৩ সালের জুন মাসে, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক আঞ্চলিক নেতাকে নিয়ে ধারাবাহিক কিছু প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয় জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে। সিপিজে ২০২৩ সালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার এমন বেশ কিছু ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরায় বসবাসরত সাংবাদিক রঘুনাথ খা-কে গ্রেপ্তার এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে নির্যাতন করার অভিযোগ এবং রাঙ্গুনিয়া-ভিত্তিক সাংবাদিক আবু আজাদকে অপহরণ ও গুরুতর মারধর। 

দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় মামলার শিকার হওয়া সাংবাদিকেরা গ্রেপ্তারজোরপূর্বক গুমের মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। এর পাশাপাশি ছিল রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের অভিযোগ। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে, সরকার ঘোষণা করেছিল যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি একটি নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। যদিও মানবাধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন যে, ভিন্নমত দমনের জন্য এই আইনটির ব্যবহারও অব্যাহত থাকবে। গত সেপ্টেম্বরে এই সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিস্থিতি বোঝার জন্য ১৮ জন বাংলাদেশী সাংবাদিকের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে সিপিজে। সেখানে দেখা গেছে :

  • ১০০% উত্তরদাতা গ্রেপ্তার/আটক হবার ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত
  • ৯৪% মনে করেন অনলাইন হয়রানি এবং ভুল তথ্য প্রচার একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়
  • ৯৪% শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে এবং ৭২% অপহৃত হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন
  • ৮৩% সরকারী নজরদারি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন

নির্বাচন কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকেরা একটি ক্রমবর্ধমান বিপজ্জনক পরিবেশে রয়েছেন। এ কারণে আমরা সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য এই রিসোর্সগুলো এক জায়গায় করেছি, যেন তাঁরা খবর সংগ্রহ ও প্রকাশের কাজে যাওয়ার সময় এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে পারেন এবং সেগুলো কমিয়ে আনতে পারেন।  

যোগাযোগ ও রিসোর্স

সহায়তার প্রয়োজন হলে সাংবাদিকেরা সিপিজের ইমার্জেন্সিতে যোগাযোগ করতে পারেন এই ইমেইলে [email protected], এবং সিপিজের সুরক্ষা সংক্রান্ত রিসোর্স ব্যবহার করতে পারেন +১ ২০৬ ৫৯০ ৬১৯১ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের মাধ্যমে। এছাড়াও, অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি সংক্রান্ত বাড়তি তথ্য ও টুল এবং সংবাদ কাভারের সময় ও তার পরে অন্যান্য সহায়তার জন্য সাংবাদিকেরা দেখতে পারেন সিপিজে-র রিসোর্স সেন্টার

সম্পাদকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চেকলিস্ট

নির্বাচনের আগে-পরে অথবা চলার সময় সাংবাদিকদের খুবই অল্প সময়ের নোটিশে কোনো সংবাদ কাভার করতে পাঠাতে পারেন সম্পাদকেরা। এসময় কর্মীদের ঝুঁকি কমানোর জন্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করতে হবে– তার একটি চেকলিস্ট থাকছে এখানে।মনে রাখতে হবে যে, সাংবাদিকেরা নজরদারির সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতির লক্ষ্যবস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে আইএমএসআই (IMSI) ক্যাচার, যেটি মোবাইল ফোন যোগাযোগে আড়ি পাতার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং অত্যাধুনিক ট্র্যাকিং সফটওয়্যার যুক্ত নজরদারি ভ্যান ব্যবহৃত হয় সেল ফোনকে লক্ষ্য করে। হারেৎজ এবং আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনকে টার্গেট করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ক্রয় করেছে এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি সেলব্রাইট থেকে সংগ্রহ করা সফটওয়্যার যা ফোন হ্যাক করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। সেইসাথে পিসিক্স (Picsix)০-এর তৈরি একটি নজরদারি ও হ্যাকিং সিস্টেম যা ফোনের নেটওয়ার্ক ও ট্রান্সমিশন আটকাতে ব্যবহার করা  হতে পারে।

কর্মী বিবেচনাসমূহ  

  • আপনার কর্মীর কি এই অ্যাসাইনমেন্টের জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে?
  • কোনো কর্মীর প্রোফাইল, লিঙ্গ, ধর্ম বা জাতিগত পরিচয় কি তাকে সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে, বিশেষ করে তিনি যদি একটি সম্ভাব্য শত্রুভাবাপন্ন ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্টিং করেন? যেমন কোনো নির্বাচনী প্রতিবাদ সমাবেশ।
  • আপনার কর্মী কি অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার জন্য শারিরীকভাবে সক্ষম? অ্যাসাইনমেন্টের সময় তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে– এমন কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কি আপনি তার সঙ্গে আলোচনা করেছেন?
  • কোনো কর্মীর নির্দিষ্ট কোনো কাজ কি তাদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে? যেমন, আলোকচিত্র সাংবাদিক, যাদের ঘটনার কাছাকাছি থাকতে হয়। 
  • অ্যাসাইনমেন্টে নিযুক্ত কোনো কর্মী কি সংবাদ কাভার করতে যাওয়া ব্যক্তি বা দলের কাছ থেকে হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন?

সরঞ্জাম এবং পরিবহন সংক্রান্ত

  • কোনো প্রতিবাদ সমাবেশ সহিংস হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকলে, আপনি কি বিশেষ সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম যেমন নিরাপত্তা হেলমেট, নিরাপত্তা গগলস, বডি আর্মার, টিয়ার গ্যাস রেসপিরেটর এবং মেডিকেল কিট সরবরাহ করেছেন? আপনার কর্মীরা কি জানেন কিভাবে এই ধরনের সরঞ্জাম সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হয়?
  • আপনার কর্মীরা কি নিজেরাই গাড়ি চালাচ্ছেন, এবং তাদের গাড়ি কি সেই রাস্তায় চলাচলের যোগ্য ও উপযুক্ত?
  • আপনি কি ঠিক করেছেন যে, কীভাবে রিপোর্টিং দলের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং প্রয়োজন পড়লে কীভাবে তারা সেখান থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন? 
  • কোভিড ১৯ এর সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি কমে গেলেও, আপনি কি আপনার কর্মীদের সঙ্গে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং মুখমন্ডল ঢাকার জন্য তাদের ভাল মানের মাস্ক এবং অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছেন?

সাধারণ বিবেচ্য বিষয়সমূহঃ

  • আপনি কি রিপোর্টিংয়ে নিযুক্ত সকল কর্মীর সঙ্গে জরুরী যোগাযোগের বিবরণ নথিভুক্ত এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করেছেন?
  • আপনার সব কর্মীর বাছে কি উপযুক্ত স্বীকৃতি, প্রেস পাস বা চিঠি আছে, যা থেকে বোঝা যায় যে, তারা আপনার প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন? 
  • আপনার সাংবাদিকেরা কোন মাত্রার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন– তা কি বিবেচনা করেছেন? সম্পাদকীয় হিসেবে যা পাওয়া যাবে তার তুলনায় সেই ঝুঁকির মাত্রা কি গ্রহণযোগ্য?
  • আপনার সাংবাদিকদের কি যথাযথ বীমা করা হয়েছে, এবং আপনি কি উপযুক্ত চিকিৎসা কভারেজ রেখেছেন?
  • কোনোভাবে আহত হলে সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিকভাবে কোথায় চিকিৎসাসেবা নেবেন– সেই জায়গাগুলো কি শনাক্ত করেছেন এবং রিপোর্টিং দলের সদস্যদের সঙ্গে সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন? 
  • আপনি কি দীর্ঘমেয়াদী ট্রমা-সম্পর্কিত মানসিক চাপের আশঙ্কার কথা বিবেচনা করেছেন এবং আলোচনা করেছেন?

আরও তথ্যের জন্য ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে সিপিজে’র রিসোর্স সেন্টার দেখুন।

২৮ জুলাই, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থকরা বাংলাদেশের ঢাকায় একটি প্রতিবাদ সমাবেশে স্লোগান দিচ্ছেন। (এপি/মাহমুদ হোসেন অপু)

ডিজিটাল সুরক্ষাঃ প্রাথমিক প্রস্তুতিসমূহ

নির্বাচন কাভার করার সময়, সাংবাদিকেরা বিস্তৃত পরিসরের হুমকির মুখে পড়তে পারেন, যার মধ্যে আছে ডিভাইস জব্দ, ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগে নজরদারি, বেশি মাত্রায় অনলাইন হয়রানি, এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। নিচের এই দিকনির্দেশনাগুলো সাংবাদিকদের আরও বেশি  নিরাপদ থাকতে সাহায্য করবে।

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু করে আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলি সুরক্ষিত করুন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টগুলো হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে৷ বেশিরভাগ অনলাইন অ্যাকাউন্টের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সেটিংস বিভাগে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করার ব্যবস্থা থাকে। একবার সক্রিয় হয়ে গেলে, আপনার অ্যাকাউন্টে লগ ইন করার জন্য ইমেইল ও পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি আপনাকে একটি কোডও দিতে হবে। এই কোডটি পেতে আপনি অথি (Authy)-এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের (2FA) সুবিধা দেয়– এমন যেকোনো অনলাইন পরিষেবার একটি ব্যাকআপ কোড ব্যবহার করার সুবিধাও থাকে। টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ফর্ম ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার মতো পরিস্থিতি না থাকলে এই ব্যাকআপ কোড ব্যবহার করুন। ফোন বা অ্যাপে কোড আসার পরিবর্তে আপনি ব্যবহার করতে পারেন এসব এককালীন কোড। নিশ্চিত করুন যে আপনি এই ব্যাকআপ কোডগুলির একটি অনুলিপি রাখছেন ৷ আপনি এগুলো প্রিন্ট দিয়ে বা লিখে রেখে নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারেন।

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA)  ব্যবহার করার পাশাপাশি, আপনার প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য ১৫টির বেশি অক্ষরের দীর্ঘ পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। আপনার পাসওয়ার্ড যত দীর্ঘ হবে, অ্যালগরিদম ব্যবহার করে বা অনুমান করে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা তত বেশি কঠিন হবে ।

আপনার পাসওয়ার্ড হতে পারে সংখ্যা, চিহ্ন এবং অক্ষরের সংমিশ্রণ, অথবা কিছু শব্দের সংকলন যা একে অপরের সঙ্গে কোনভাবে সম্পর্কিত নয়, যেমন elephanticecreamswimmingtelephone। পাসওয়ার্ড পুনঃব্যবহার করবেন না বা আপনার পাসওয়ার্ডে ব্যক্তিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করবেন না যা সহজেই অনলাইনে পাওয়া যায়, যেমন আপনার জন্ম তারিখ।

বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্যবহারের পাসওয়ার্ড তৈরি, সংরক্ষণ ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণের জন্য একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন। আপনার জন্য কোন পাসওয়ার্ড ম্যানেজারটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা দেখতে সব পাসওয়ার্ড ম্যানেজার নিয়ে একটু গবেষণা করুন৷ আপনার পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের জন্য একটি দীর্ঘ অনন্য পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। আপনি যদি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে না পারেন, তাহলে আপনার পাসওয়ার্ডগুলো কোথাও লিখে রাখুন এবং সেগুলিকে নিরাপদে সংরক্ষণ করুন। তবে যারা প্রচুর ভ্রমণ করেন, কিংবা যাদের আটক হওয়ার বা বাড়িতে তল্লাশি চালানোর ঝুঁকি আছে– এমন সাংবাদিকদের জন্য এটি নিরাপদ বিকল্প নাও হতে পারে।

আপনার প্রতিটি অ্যাকাউন্টের “অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভিটি” বিভাগ নিয়মিত পর্যালোচনা করুন। এটি সাধারণত “সেটিংস” বিভাগে পাওয়া যায়। এটি আপনাকে জানাবে যে, অচেনা কোন  ডিভাইস থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে লগ ইন করা হয়েছে কিনা। আপনার অচেনা কোনো ডিভাইস থেকে যদি কোনো অ্যাকাউন্টে লগ ইন করা দেখেন, তাহলে উচিত হবে অবিলম্বে সেই নির্দিষ্ট ডিভাইস থেকে আপনার অ্যাকাউন্ট লগ আউট করা। নিজের কাছে রেকর্ড রাখার জন্য লগ আউট করার আগে সেটির একটি স্ক্রিনশট নিয়ে রাখতে পারেন।

একাধিক মানুষ ব্যাবহার করে এমন কম্পিউটার থেকে আপনার অ্যাকাউন্টগুলোতে  প্রবেশ করা এড়িয়ে চলুন, উদাহরণ হিসেবে, একটি ইন্টারনেট ক্যাফের কথা বলা যায়৷ যদি আপনার কোনো বিকল্প না থাকে, তাহলে কাজ শেষে অবিলম্বে লগ আউট করুন এবং আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস মুছে ফেলুন।

সহকর্মী বা সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগের সময় হোয়াটসঅ্যাপ বা সিগন্যালের মতো এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং পরিষেবাগুলি ব্যবহার করুন৷ প্রয়োজন হলে, বার্তাগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে মুছে ফেলার ব্যবস্থা করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনার মেসেজিং অ্যাকাউন্ট একটি পিন লক দিয়ে সুরক্ষিত আছে।

পূর্ববর্তী নির্বাচনের সময়গুলোতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেটের গতি কমানোর নির্দেশ দিয়েছিল যা সাংবাদিকদের প্রতিবেদন তৈরি ও পাঠানো অথবা সোর্স ও সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করার সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছিল।

ফলে এরকম আংশিক ইন্টারনেট শাটডাউনের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন– তা নিয়ে আপনার নিউজরুমের সঙ্গে একটি পরিকল্পনা করুন। কীভাবে এবং কখন আপনারা সামনাসামনি দেখা করবেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার না করেই সম্পাদকদের কাছে তথ্য ও নথিপত্র হস্তান্তর করবেন– সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করুন। ল্যান্ডলাইন যোগাযোগের বিস্তারিত আদান-প্রদান করার কথা বিবেচনা করুন, তবে সচেতন থাকুন যে ল্যান্ডলাইন কল অনিরাপদ এবং সংবেদনশীল কথোপকথনের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।

ব্লক হওয়া সাইটগুলোতে প্রবেশ করার জন্য আপনার ডিভাইসে একটি ভিপিএন (VPN) ইনস্টল করুন৷ ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করবার ক্ষেত্রে স্থানীয় আইন নিয়ে কিছুটা গবেষণা করুন, যেহেতু কিছু দেশে এটি বেআইনি। এছাড়া ইতিপূর্বে আংশিক ইন্টারনেট বন্ধের সময় কোন ভিপিএন (VPN) সবচেয়ে ভাল কাজ করেছে– সে ব্যাপারে খোঁজ করুন।আরও তথ্যের জন্য ইন্টারনেট বন্ধের প্রস্তুতি সম্পর্কে সিপিজে-এর নিরাপত্তা নোট পড়ুন (পাওয়া যায় বাংলাতেও)।

ডিজিটাল সুরক্ষাঃ ডিভাইস সুরক্ষিত করুন

সাংবাদিকরা প্রতিবেদন এবং ফাইল শেয়ার করার পাশাপাশি সহকর্মী এবং তথ্যদাতার সাথে যোগাযোগের জন্য সাধারণত তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডিজিটাল সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়। বিশেষ করে যদি সাংবাদিকদের আটক করা হয় এবং তাদের ফোন জব্দ বা ভেঙে ফেলা হয়। ফলে অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার আগে, নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ:  

● আপনার ফোন বা কম্পিউটারে কোন ধরনের তথ্য আছে এবং আপনাকে আটক করা হলে বা আপনার ডিভাইসটি নিয়ে অনুসন্ধান করা হলে তা কীভাবে আপনাকে বা অন্যদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে তা জানুন।

● রিপোর্টিংয়ের কাজে যাওয়ার আগে, ক্লাউডে বা এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভে আপনার ফোনে থাকা তথ্যের ব্যাক আপ রাখুন। আপনি যে ডিভাইসটি বহন করছেন তা থেকে যেকোনো সংবেদনশীল বা ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন কাজের নথিপত্র এবং পরিবারের সদস্যদের ছবির অ্যাক্সেস বন্ধ বা সীমিত করুন।

● রিপোর্টিংয়ের সময় আপনি যেসব অ্যাকাউন্ট ও অ্যাপ ব্যবহার করবেন না– সেগুলো থেকে লগ আউট করুন এবং সেগুলো আপনার ফোন থেকে সরিয়ে ফেলুন। বিভিন্ন ব্রাউজার থেকে লগ আউট করুন এবং আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস মুছে দিন। আপনার ফোন কেড়ে নেওয়া হলে এবং অনুসন্ধান করা হলে এটি আপনার অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রবেশ করা থেকে আরও ভালভাবে সুরক্ষা দেবে। 

● রিপোর্টিংয়ে যাওয়ার আগে আপনার সব ডিভাইসকে পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত করুন এবং দূর থেকে তথ্য মুছে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা (রিমোট ওয়াইপ) চালু করুন। এই রিমোট ওয়াইপ শুধুমাত্র একটি ইন্টারনেট সংযোগের সাপেক্ষেই কাজ করবে। আপনার ফোন আনলক করতে বায়োমেট্রিক্স, যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন, কারণ আপনাকে আটক করা  হলে এটি আপনার ডিভাইসে প্রবেশেধিকার সহজ করে দিতে পারে।

● যতটা সম্ভব কম ডিভাইস সঙ্গে রাখুন। আপনার কাঝে অতিরিক্ত ডিভাইস থাকলে আসাইনমেন্টে সেগুলো সঙ্গে নিয়ে যান এবং ব্যক্তিগত বা কাজের ডিভাইসগুলোকে রেখে যান।

● আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, তাহলে এনক্রিপশন চালু করার কথা বিবেচনা করুন। নতুন আইফোনগুলিতে শুরু থেকেই এনক্রিপশন চালু থাকে। এনক্রিপশন ব্যবহার সংক্রান্ত আইনগুলো দেখে নিন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, অনুগ্রহ করে সিপিজে-এর ডিজিটাল নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেখুন (যেটি বাংলাতেও পাওয়া যায়)।

২৮ জুলাই, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বাংলাদেশের ঢাকায় একটি শান্তি সমাবেশের জন্য জড়ো হওয়ার সময় স্লোগান দিচ্ছেন। (এপি/মাহমুদ হোসেন অপু)

ডিজিটাল সুরক্ষাঃ অনলাইন হয়রানি এবং ভুল তথ্য প্রচারণা

নির্বাচনের সময় টার্গেটেড অনলাইন প্রচারণাসহ অনলাইন হয়রানি বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা প্রায়ই অনলাইন আক্রমণকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হন, যারা সাংবাদিক এবং তাদের কাজকে হেয় করতে চায়। এটি প্রায়শই হতে পারে সমন্বিত হয়রানি এবং ভুল তথ্য প্রচারের ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে, যার ফলে সাংবাদিকেরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন না, এবং তাদেরকে অফলাইনে থাকতে বাধ্য হতে হয়। অনলাইন আক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার কাজটি সহজ নয়। তবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সাংবাদিকেরা নিজেদের এবং তাদের অ্যাকাউন্টগুলিকে আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত করতে পারেন।

অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা

অনলাইন হয়রানিকারীরা প্রায়ই আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে আপনাকে টার্গেট এবং হয়রানি করতে পারে। আপনার অ্যাকাউন্ট ও তথ্য আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিন:

  • টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) ব্যবহার করে কীভাবে আপনার অ্যাকাউন্টগুলো সুরক্ষিত করতে হয় এবং কীভাবে সুরক্ষিত পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হয় তা শিখতে এই গাইডের শুরুতে প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক অংশটি পড়ুন।
  • সবচেয়ে ভালো হয়, কাজের জন্য এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আলাদা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করা ৷ উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি পেশাগত কাজের জন্য ফেইসবুক ব্যবহার করেন, তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি ব্যক্তিগত ছবি  এবং অন্যান্য তথ্যের  প্রবেশেধিকার বন্ধ  বা সীমাবদ্ধ করেছেন৷
  • প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আপনার গোপনীয়তা সেটিংস পর্যালোচনা করুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি জানেন  আপনার ছবি ও তথ্যে কার কার  প্রবেশেধিকার আছে৷ আপনার জন্ম তারিখ এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের বিবরণের মতো ব্যক্তিগত তথ্য সরিয়ে ফেলুন বা গোপন রাখুন  ।
  • আপনার অ্যাকাউন্টগুলি পর্যবেক্ষণ করুন এবং এমন কোনও ফটো বা ছবি মুছে ফেলুন যা আপনাকে অপমানিত করার উপায় হিশেবে ভুলভাবে  ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি একটি সাধারণ কৌশল যা অনলাইন হয়রানিকারীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়।
  • ক্রমবর্ধমান হয়রানির লক্ষণ বা ডিজিটাল হুমকি একটি শারীরিক হুমকি হয়ে উঠতে পারে এমন ইঙ্গিতের র জন্য আপনার অ্যাকাউন্টগুলো  পর্যবেক্ষণ করুন৷ সচেতন থাকুন যে নির্দিষ্ট কিছু সংবাদ  উচ্চ মাত্রার  হয়রানি বিষয়বস্তু হতে পারে । 
  • পরিবার-স্বজন  এবং বন্ধুদের সাথে অনলাইন হয়রানি সম্পর্কে  কথা বলুন। অপব্যবহারকারীরা প্রায়শই সাংবাদিকদের আত্মীয় এবং সামাজিক বৃত্তের সদস্যদের  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট  থেকে সাংবাদিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।  তাদের অ্যাকাউন্ট  থেকে আপনার ছবি  সরাতে বা তাদের অ্যাকাউন্ট লক ডাউন করতে তাদের অনুরোধ করতে পারেন। ● অনলাইন হয়রানি সম্পর্কে আপনার সংবাদ প্রতিষ্ঠানের  সাথে কথা বলুন এবং হয়রানি  গুরুতর হলে কি  পদক্ষেপ গৃহীত হবে তার  পরিকল্পনা করুন৷

আক্রমণের সময়

  • আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনার প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য দীর্ঘ পাসওয়ার্ড আছে এবং টু -ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু আছে।
  • হয়রানির শিকার হলে সেটি কিছুটা কমে না আসা পর্যন্ত আপনার অ্যাকাউন্টগুলোকে প্রাইভেট করা এবং অফলাইনে চলে যাওয়ার কথা বিবেচনা করুন। 
  • অনলাইন হয়রানিকারীদের সাথে তর্কে না জড়ানোর চেষ্টা করুন, কারণ এটি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে৷ 
  • আক্রমণের পেছনে কারা রয়েছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী– তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। হতে পারে আপনার সম্প্রতি প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদনের কারণে এটি হচ্ছে। 
  • সাংবাদিকদের উচিত আপত্তিজনক বা হুমকিমূলক আচরণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং সেটির রেকর্ড রাখা। 
  • উদ্বেগজনক যেকোনো কমেন্ট বা ছবির স্ক্রিনশট রাখুন। সেটির সময়, তারিখ এবং যে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে হয়রানি করা হচ্ছে– সেটির হ্যান্ডেল লিপিবদ্ধ করুন। যদি এসব হয়রানির বিষয়ে আপনার সংবাদমাধ্যম, সম্পাদক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে– এমন কোনো সংগঠন, বা কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়, তাহলে এসব তথ্য পরবর্তীতে কাজে আসতে পারে।
  • আপনার পরিবার, সহকর্মী ও বন্ধুদের জানান যে, আপনি অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শত্রুরা প্রায়ই আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ও কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগ করবে এবং নানাবিধ তথ্য বা ছবি পাঠিয়ে আপনার সুনাম নষ্টের চেষ্টা করবে। 
  • যারা আপনাকে অনলাইনে হয়রানি করছে আপনি তাদের ব্লক বা মিউট করতে চাইতে পারেন।
  • কোনো অনলাইন হুমকি শারীরিক হুমকিতে পরিণত হতে পারে কিনা– তা বোঝার জন্য আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে আসা মন্তব্য খতিয়ে দেখুন। এর মধ্যে থাকতে পারে এমন কমেন্ট, যেখানে আপনার ঠিকানা পোস্ট করে (যা ডক্সিং নামে পরিচিত) অন্যদেরকে বলা হচ্ছে আপনাকে আক্রমণ করার জন্য। পাশাপাশি দেখুন, একই ব্যক্তির কাছ থেকে আসা হয়রানির পরিমাণ বাড়ছে কিনা।
  • অনলাইন হয়রানির ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো অভিজ্ঞতা হতে পারে। নিশ্চিত করুন যে আপনাকে সহায়তা করার মতো একটি নেটওয়ার্ক আছে। সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনার নিয়োগকর্তাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকেন।

ডিজিটাল সুরক্ষাঃ উপকরণ সুরক্ষিত ও সংরক্ষণ করা

নির্বাচনের সময় উপকরণ সংরক্ষণ এবং সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি ভালো প্রোটোকল থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো সাংবাদিককে আটক করা হয়, তবে তাদের ডিভাইসগুলো নিয়ে যাওয়া এবং তল্লাশি চালানো হতে পারে, যা সাংবাদিক এবং তাদের তথ্যদাতাদের জন্য গুরুতর পরিণতি বয়ে আনতে পারে। নির্বাচন কাভার করার সময় ডিভাইসগুলো ভাঙা বা চুরিও হতে পারে। যার ফলে তথ্য হারিয়ে যেতে পারে যদি ভালোভাবে ব্যাক আপ না রাখা হয়।

  • ফোন ও কম্পিউটারসহ আপনার ডিভাইসগুলোতে কোন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে তা পর্যালোচনা করুন৷ সংবেদনশীল তথ্য আছে বা এমন যেকোনো কিছু– যেটি আপনাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে– সেগুলোর ব্যাকআপ রাখতে হবে এবং ডিভাইস থেকে মুছে ফেলতে হবে। মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধার করার বিভিন্ন উপায় আছে। তাই খুব সংবেদনশীল যেকোনো তথ্য শুধু মুছে ফেলার পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে স্থায়ীভাবে মুছে ফেলতে হবে।
  • একটি স্মার্টফোনে থাকা তথ্য পর্যালোচনার সময়, আপনার ফোনে (হার্ডওয়্যার) সংরক্ষিত তথ্যের পাশাপাশি ক্লাউডে (Google Photos বা iCloud) সংরক্ষিত তথ্যও পর্যালোচনা করতে হবে।
  • মেসেজিং অ্যাপ যেমন হোয়াটসঅ্যাপে থাকা কন্টেন্ট পরীক্ষা করুন। সাংবাদিকদের উচিত হবে তাঁদের   ঝুঁকিতে ফেলে এমন যেকোনো তথ্য সংরক্ষণ করা এবং তারপর মুছে ফেলা। সতর্ক থাকুন যে, হোয়াটসঅ্যাপ কোনো অ্যাকাউন্টের সব তথ্য তার সঙ্গে লিঙ্ক করা ক্লাউড পরিষেবাতে ব্যাক আপ করে, যেমন আই ক্লাউড (iCloud) বা গুগল ড্রাইভ (Google Drive)৷
  • আপনি কোথায় তথ্যের ব্যাক আপ রাখতে চান– সে ব্যাপারে ভাবুন। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তথ্যগুলো ক্লাউডে রাখবেন নাকি কোনো এক্সটার্নাল হার্ড বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভে। 
  • সাংবাদিকদের উচিত নিয়মিতভাবে তাদের ডিভাইস থেকে উপাত্ত স্থানান্তরিত করা এবং তাদের পছন্দের ব্যাকআপ বিকল্পে সংরক্ষণ করা। এটি নিশ্চিত করবে যে আপনার ডিভাইসগুলো নিয়ে নেওয়া হলে বা চুরি হয়ে গেলেও আপনার কাছে তথ্যগুলোর একটি অনুলিপি থাকবে ৷
  • ব্যাক আপ রাখা তথ্যগুলো এনক্রিপ্ট করাও একটি ভালো চিন্তা। এটি করতে পারেন এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভ এনক্রিপ্ট করার মাধ্যমে। এছাড়াও আপনি আপনার ডিভাইসের জন্যও এনক্রিপশন চালু করতে পারেন। সাংবাদিকদের উচিৎ হবে, তারা যে দেশে কাজ করছেন, সেদেশের আইনগুলো ভালোভাবে দেখে নেওয়া যে, সেখানে এনক্রিপশনের বৈধতা নিয়ে কী বলা হয়েছে। 
  • যদি সন্দেহ করেন যে, আপনি আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারেন এবং আপনার এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভসহ অন্যান্য ডিভাইস চুরি হতে পারে, তাহলে সেগুলো আপনার বাড়িতে না রেখে অন্য জায়গায় রাখা উচিত।
  • আপনার সমস্ত ডিভাইস পিন দিয়ে লক করে রাখুন৷ পিন যত দীর্ঘ হবে, এটি ভাঙ্গা তত কঠিন হবে ।
  • আপনার ফোন বা কম্পিউটারকে আগে থেকেই রিমোট ওয়াইপ করার জন্য সেট আপ করুন। এই ব্যবস্থাটি আপনাকে দূর থেকে ডিভাইসের তথ্য মুছে ফেলার সুবিধা দেয়। কর্তৃপক্ষ আপনার ডিভাইস জব্দ করলে এই ব্যবস্থা কাজে লাগাতে পারেন। তবে এটি কাজ করবে যদি ডিভাইসগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকে।
  • আপনি যদি অ্যাসাইনমেন্টের সময় ছবি তোলেন  বা ভিডিও ধারণ  করেন এবং আপনি উদ্বিগ্ন থাকেন যে, আপনার ডিভাইসটি জব্দ করা এবং তল্লাশী চালানো হতে পারে তাহলে ডিভাইসের তথ্যগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্লাউডে ব্যাক আপ রাখার ব্যবস্থা তৈরি করুন। এবং নিশ্চিত করুন যে, ক্লাউড অ্যাকাউন্টটি একটি দীর্ঘ পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত এবং সেখানে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু করা আছে। আপনি হোয়াটসঅ্যাপ বা সিগন্যালের মাধ্যমে নিজেকে বা অন্যদেরকে ধারণ করা ছবি  এবং ভিডিও পাঠিয়ে রাখতে পারেন। তবে মাথায় রাখুন যে, এই মেসেজিং অ্যাপগুলোর মাধ্যমে সীমিত  আকারের ভিডিও ফাইল পাঠানো যায়। ছবিগুলি আপলোড বা পাঠানোর পরে,  নিশ্চিত করুন যে আপনি সেগুলি ডিভাইস থেকে মুছে ফেলেছেন৷
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট দেবার পর প্রচারমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন। (এএফপি/ইন্দ্রনীল মুখার্জি)

শারীরিক নিরাপত্তা: গ্রেপ্তার, আটক এবং অপহরণ

২০১৯ সালের জানুয়ারীতে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক হেদাইত হোসেন মোল্লাকে এই অভিযোগে গ্রেপ্তার করে যে, তিনি সাধারণ নির্বাচনের সময় খুলনা থেকে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা সম্পর্কে “মিথ্যা তথ্য” প্রদান করে প্রতিবেদন করেছিলেন।

আপনি যদি এমন একটি অ্যাসাইনমেন্টে থাকেন যেখানে গ্রেপ্তার বা আটকের অধিক সম্ভাবনা আছে, তাহলে আপনাকে আগে থেকেই নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:

  • আপনার অফিস, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার একটি ব্যবস্থা তৈরি করুন। তাদের জানান যে আপনি কখন কখন যোগাযোগ করার পরিকল্পনা করছেন, কতক্ষণ বিলম্ব হলে তা উদ্বেগজনক  এবং কোন সময়ে তারা আপনার ফিরে আসার আশা করতে পারেন।
  • সর্বদা নিশ্চিত করুন যে, আপনার কাছে সঠিক এবং বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে (যেমন, প্রেস ক্রেডেনশিয়াল, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা ভিসা)।
  • আপনার সাথে একটি পরিপূর্ণ চার্জ করা মোবাইল ফোন, কিছু নগদ টাকা, প্রয়োজনীয় ওষুধ, এবং পানীয় জল, শক্তি জোগাবে এমন জলখাবার এবং গরম কাপড়ের মতো প্রয়োজনীয় মৌলিক সামগ্রী সঙ্গে নিন।
  • পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত পোষাক পরুন, পুলিশের হাতে আটক হলে আপনাকে দীর্ঘ সময় একই পোশাক পরে থাকতে হতে পারে। 
  • আপনি যদি গ্রেপ্তার হন তাহলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন সে ব্যাপারে ভেবে রাখুন। সচেতন থাকুন যে, পরিস্থিতি অনুযায়ী পুলিশ অফিসাররা মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে পারে এবং আক্রমণাত্মক হতে পারে।
  • আপনি গ্রেপ্তার হলে যোগাযোগ করা যাবে– এমন একজন আইনজীবী ঠিক করে রাখুন। ফোনে তাদের নাম এবং যোগাযোগের নম্বর লিখে রাখুন। সেটি একটি কাগজের টুকরো বা আপনার হাতেও লিখে রাখুন।

আটক বা গ্রেপ্তার হলে

  • শান্ত ও সশ্রদ্ধ থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। টুপি বা সানগ্লাস পরে থাকলে সেগুলি খুলে ফেলুন। সম্ভব হলে অফিসারের সাথে দৃষ্টি সংযোগ বজায় রাখুন এবং প্রতিরোধ করা থেকে বিরত থাকুন। 
  • আপনি যদি গ্রেপ্তারের ছবি বা ভিডিও ধারণ করেন, তবে তা পুলিশকে উত্তেজিত করতে পারে এবং আপনার ডিভাইসগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত বা বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
  • সম্ভব হলে আপনার ব্যাগ, সরঞ্জাম এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোকে আপনার দৃষ্টিসীমার মধ্যে রাখুন৷
  • অ্যাজমা বা ডায়াবেটিসের মতো যেকোনো স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিশকে অবগত করুন। আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন ওষুধ গ্রহণ করলে গ্রেপ্তার করার সাথে সাথেই পুলিশকে জানান।
  • আপনার যদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ইতিহাস থাকে বা সেই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগলে পুলিশকে জানান।
  • সম্ভব হলে, জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা যায় এমন যত বেশি সম্ভব তথ্য নথিভুক্ত করুন। যেমন, তাদের নাম, নম্বর, বিভাগ এবং সহজেই শনাক্তযোগ্য বৈশিষ্ট্য (যেমন, ট্যাটু বা গোঁফ/দাঁড়ি)।
  • আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি নজর দিন, যারা আপনার গ্রেপ্তারের সাক্ষী হতে পারে। প্রয়োজনে তাদের যথাযথ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলুন।
  • আপনার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে, পুলিশ অফিসাররা আপনাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে পারে বা আপনাকে কোনো অপরাধ করার কথা স্বীকার করতে বাধ্য করতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আপনার নিজের ভাষ্যে অটল থাকুন। আপনি যা করেননি তা স্বীকার না করে আইনি সহায়তা আসার জন্য অপেক্ষা করুন।
  • আপনি যদি কোনো পুলিশ অফিসার দ্বারা লাঞ্ছিত হন, তাহলে প্রাপ্ত আঘাত, গৃহীত চিকিৎসা এবং  হাসপাতালে যাওয়ার প্রমাণ রাখার চেষ্টা করুন। ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের নাম ও বাহ্যিক বিবরণ নথিভুক্ত করার চেষ্টা করুন।

অপহরণ

২০২২ সালের জানুয়ারিতে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন করার পরে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারপারসন পদের জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নির্দেশে কমলগঞ্জের সাংবাদিক হোসেন বক্সকে একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে থেকে অপহরণ এবং গুরুতরভাবে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

  • যখন কোন সাংবাদিকদকে অপহরণ করা হয়, প্রায়শই এটি হয়ে থাকে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বা ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি বা অপরাধীদের বিরুদ্ধে যায় এমন প্রতিবেদনের কারণে।
  • আপনার যদি বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে আপনি অপহরণের ঝুঁকিতে আছেন (অর্থাৎ, আপনি হুমকি, সতর্কতা পেয়েছেন বা নজরদারির প্রমাণ পেয়েছেন) তাহলে আপনার উচিত এই তথ্যটি সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারকে জানানো।  
  • কর্মস্থলে আসা যাওয়া কিংবা রাতের বেলা চলাচল বিশেষভাবে বিপজ্জনক হতে পারে। আপনার চলাচলের অভ্যেসের পরিবর্তন করুন এবং যে কোনো মূল্যে কোন প্রকার নির্দিষ্ট প্যাটার্নে চলাচল করা এড়িয়ে চলুন। আপনার অবস্থান বা গন্তব্য আগে থেকে ঘোষণা করবেন না।
  • একা বা সন্ধ্যার পর কাজ করা এড়িয়ে চলুন।
  • উদ্বিগ্ন হবার কারণ থাকলে, আপনার ফোনে একটি ট্র্যাকিং অ্যাপ যুক্ত করুন এবং সহকর্মী, বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সেটি শেয়ার করার কথা বিবেচনা করুন৷ এ ধরনের অ্যাপগুলোতে একটি প্যানিক বাটন থাকে, যেটি আপনার সহায়তার প্রয়োজন হলে কাজে আসবে। 
  • আপনার অফিস, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের ব্যবস্থা তৈরি করুন। তাদের জানান যে আপনি কত ঘন ঘন যোগাযোগের পরিকল্পনা করছেন, কতক্ষণ বিলম্ব হলে তা উদ্বেগজনক এবং কোন সময়ে তারা আপনার ফিরে আসার আশা করতে পারেন। আপনি কোনো ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করছেন কিনা এবং প্যানিক অ্যালার্ম বেজে উঠলে তারা কী করবেন তা জানিয়ে দিন। 
  • আপনি নিখোঁজ হয়ে গেলে কী করা হবে– তার একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি রাখুন। যেমন, নিশ্চিত করুন যে, এমন ঘটনা ঘটলে আপনার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনার সম্পাদক বা কোনো সহকর্মীকে জানানো হবে, যারা আপনার অবস্থান জানার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে খোঁজখবর করা শুরু করবে। 
  • যদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়া যায়, তাহলে নিশ্চিত করুন যে আপনার সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিপিজে-এর মতো সংস্থাগুলির সাথে দ্রুত যোগাযোগ করে ৷
১১ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে বাংলাদেশের একটি ভোট কেন্দ্রে একজন নারী অবস্থান করছেন। (এপি/আল-এমরুন গর্জন)

শারীরিক সুরক্ষা: নির্বাচনী সমাবেশ, ভোটকেন্দ্র ও বিক্ষোভ থেকে রিপোর্টিং

নির্বাচনের সময় সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের প্রায়ই জনাকীর্ণ সমাবেশ, প্রচার-প্রচারণা ও বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মতো কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে হয়। এপ্রিলে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল যে, সাংবাদিকেরা নির্বাচন কাভারের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না, পূর্বানুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না, বা সেখান থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। ইতিপূর্বে বাংলাদেশে সাংবাদিকেরা ভোট কেন্দ্রে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন শারীরিক হামলা এবং প্রবেশাধিকার না পাওয়ার মাধ্যমে। এই ধরনের ঘটনায় ঝুঁকি কমাতে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের নিম্নলিখিত নিরাপত্তা পরামর্শ বিবেচনা করা উচিত:

রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশ

  • নিশ্চিত করুন যে, আপনার কাছে সঠিক স্বীকৃতিপত্র বা প্রেস আইডেন্টিফিকেশন আছে। ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে, নিয়োগকর্তার কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠি কাজে আসতে পারে। নিরাপদ মনে করলেই কেবল সেটি সামনে রাখুন। পরিচয় বা স্বীকৃতিপত্রটি ঘাড়ে ফিতা দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে এটি বেল্টে ক্লিপ দিয়ে লাগিয়ে রাখুন বা আপনার বাহুতে একটি স্বচ্ছ ভেলক্রো থলিতে রাখুন। 
  • সংবাদমাধ্যমের নাম লেখা নেই– এমন পোশাক পরুন এবং প্রয়োজনে সরঞ্জাম ও যানবাহন থেকে সংবাদমাধ্যমের লোগো সরিয়ে দিন।
  • স্যান্ডেল বা স্লিপ-অন জুতা পরা এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে, গোড়ালির ভারবহন করে– এমন শক্ত সোল, লেইসের মজবুত জুতা পরুন।
  • আপনার যানবাহন এমন নিরাপদ জায়গায় রাখুন, যেখান থেকে সহজে প্রস্থান করা যায়। অথবা নিশ্চিত করুন যে আপনার কাছে নিশ্চিতভাবে একটি বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা আছে।
  • পরিস্থিতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে উঠলে যেন দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে পারেন– এমন কৌশল ঠিক করে রাখুন। আপনাকে হয়তো সেই জায়গায় পৌঁছানোর পর এটি ঠিক করতে হতে পারে। তবে আগে থেকেও কিছু পরিকল্পনা করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনি আপনার অবস্থান থেকে প্রস্থানের  সমস্ত পথ চিহ্নিত  করেছেন৷
  • সম্ভব হলে, দলবেঁধে কাজ করুন অথবা অন্য কোনো সহকর্মী বা সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন।
  • জমায়েতের মেজাজমর্জি বোঝার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে সেখানে উপস্থিত থাকা অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনে অন্য প্রতিবেদক বা আলোকচিত্র সাংবাদিকের সঙ্গে যাওয়ার কথা বিবেচনা করুন। 
  • কোনো ইভেন্টের ভেতরে গিয়ে, নিরাপদ মনে না করলে সংবাদমাধ্যমের জন্য  বরাদ্দ এলাকা থেকে ঘটনা কাভার করুন। আপনি বিপদে পড়লে নিরাপত্তাকর্মী বা পুলিশ সহায়তা করবে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন। 
  • যদি জমায়েত বা বক্তারা সংবাদমাধ্যমের  প্রতি বিদ্বেষী হন, তাহলে মৌখিক গালিগালাজ শোনার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন। এমন পরিস্থিতিতে, শুধু আপনার কাজ করে যান  এবং প্রতিবেদন তৈরি করুন। গালিগালাজের কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। উপস্থিত জনতার সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না। মনে রাখবেন, অন্যরা পেশাদার না হলেও আপনি একজন পেশাদার।
  • যদি ভিড় থেকে থুতু বা বা কোনো কিছু ছুড়ে মারার আশঙ্কা থাকে, এবং আপনি রিপোর্টিংয়ের জন্য বদ্ধপরিকর থাকেন, তাহলে একটি হুডযুক্ত, জলরোধী টুপি পরার কথা বিবেচনা করুন। 
  • পরিবেশ যদি প্রতিকূল হয়ে ওঠে, তাহলে অনুষ্ঠানস্থল বা তার আশেপাশে বেশি সময় ঘোরাফেরা করা থেকে বিরত থাকুন এবং মানুষজনকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে শুরু করবেন না। 
  • অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে থেকে রিপোর্টিংয়ের লক্ষ্য থাকলে, একজন সহকর্মীর সঙ্গে মিলে কাজ করা বুদ্ধিদীপ্ত হবে। এমন একটি নিরাপদ জায়গা থেকে রিপোর্টিং করুন, যেখান থেকে সহজে বেরিয়ে যাওয়া যাবে এবং আপনার যানবাহনের কাছে পৌঁছানোর রাস্তাটি ভালোমতো জেনে নিন। হামলার আশঙ্কা করলে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করুন এবং ঘটনাস্থলে থাকার সময় কমিয়ে আনুন। 
  • যদি কাজটি কঠিন বা ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাহলে আপনার আবেগ প্রকাশ করা হতে  বিরত হবেন না। আপনার সহকর্মী  এবং উর্ধ্বতনদের  বলুন। এ ব্যাপারে তাঁদের প্রস্তুত থাকা এবং প্রত্যেকে একে অপরের কাছ থেকে শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবাদ সমাবেশ সংক্রান্ত পরিকল্পনা

বাংলাদেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ একটি সাধারণ ঘটনা। পুলিশ অতীতে বিক্ষোভকারীদের দমন করতে গোলাবারুদ, রাবার বুলেট, পেলেট গান, টিয়ার গ্যাস, লাঠিসোটা ব্যবহার করেছে। যদি সহিংসতার আশঙ্কা থাকে, তাহলে প্রতিরক্ষামূলক নিরাপত্তা গগলস বা চশমা, হেলমেট, টিয়ার গ্যাস রেসপিরেটর ব্যবহার এবং প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরার কথা বিবেচনা করুন। আরও তথ্যের জন্য CPJ-এর ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম নির্দেশিকা দেখুন।

  • আপনি যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেই জায়গা সম্পর্কে আগে থেকে গবেষণা করুন। জরুরী পরিস্থিতিতে আপনি কী করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করুন এবং সম্ভাব্য নিরাপদ প্রস্থানের সমস্ত পথ চিহ্নিত করুন।
  • বিক্ষোভ-প্রতিবাদের জায়গাগুলোতে একা কাজ করা উচিত নয়। একজন সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করুন এবং আপনার অবস্থান সম্পর্কে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের ব্যবস্থা গড়ে তুলুন। সন্ধ্যার পর কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং সম্ভব হলে তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আরও তথ্যের জন্য, একা একা রিপোর্টিং করা সাংবাদিকদের জন্য সিপিজে-এর পরামর্শ দেখুন।
  • কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা থাকলে একটি মেডিকেল কিট সঙ্গে নিন যদি এবং নিশ্চিত করুন যে আপনার মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ চার্জ করা আছে।
  • ঢিলেঢালা পোশাক, রাজনৈতিক স্লোগান, সংবাদমাধ্যমের ব্র্যান্ডিং সম্বলিত পোশাক, সামরিক প্যাটার্নের পোশাক, রাজনৈতিক অর্থ রয়েছে এমন রঙের পোশাক এবং দাহ্য পদার্থ (যেমন, নাইলন) দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করা এড়িয়ে চলুন।
  • শক্ত সোল, লেইস এবং গোড়ালির জন্য সহায়ক জুতা পরুন।
  • লম্বা চুল বেঁধে রাখুন, যেন কেউ আপনাকে পিছন থেকে টেনে ধরতে না পারে।
  • সঙ্গে যতটা সম্ভব কম সংখ্যক মূল্যবান জিনিসপত্র রাখুন। ভেঙে যেতে পারে– এমন কোনো সরঞ্জাম গাড়িতে রেখে যাবেন না। অন্ধকারের পরে চুরির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সতর্কতা ও অবস্থান

  • আপনার অবস্থান বিবেচনা করুন এবং সব সময় পরিস্থিতিগত সচেতনতা বজায় রাখুন। সম্ভব হলে, একটি সুবিধাজনক উঁচু স্থান খুঁজুন, যা আরও বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
  • কীভাবে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যাবেন– তার একটি পরিকল্পনা রাখুন। সেই সঙ্গে, আপনি যদি অন্যদের সঙ্গে মিলে কাজ করেন, তাহলে জরুরী পরিস্থিতিতে কোথায় মিলিত হবেন– তা ঠিক করে রাখুন।
  • নিকটতম চিকিৎসা সহায়তাকেন্দ্র চিহ্নিত করুন।
  • ভিড়ের মধ্যে কাজ করলে কৌশল পরিকল্পনা করুন। ভিড়ের বাইরে থাকুন এবং মাঝখানে ঢুকে যাওয়া এড়িয়ে চলুন, যেখান থেকে বের হওয়া কঠিন হবে।
  • ভীড় ও জমায়েত নিয়ে কর্তৃপক্ষের মনোভাব কী এবং তারা কেমন আচরণ করতে পারে– সেদিকে সব সময় খেয়াল রাখুন। জনতা উত্তেজিত হলে পুলিশ আরো বেশি  আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে (বা উল্টোটাও হতে পারে)। দৃশ্যমান  ইঙ্গিত, যেমন দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের পোশাক পরিহিত পুলিশের আগমন বা কোনো কিছু ছুড়ে মারা– এসব হলো সম্ভাব্য ইঙ্গিত যে, তারা আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে। এরকম বিপদ সংকেত বা রেড ফ্ল্যাগ দেখলে নিরাপদ স্থানে ফিরে যান বা দ্রুত প্রস্থানের পরিকল্পনা করুন।
  • আলোকচিত্র সাংবাদিকদের সাধারণত ঘটনাগুলো আরও কাছ থেকে কাভার করতে হয় বলে তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। ফলে বিশেষভাবে তাদের দিকে কারও নজর রাখা উচিৎ। এবং ফটোগ্রাফারদের উচিৎ কিছু সময় পরপরই ভিউফাইন্ডার থেকে চোখ সরিয়ে চারপাশে খেয়াল করা। শ্বাসরোধের ঝুঁকি এড়াতে, ক্যামেরার ফিতা গলায় ঝুলিয়ে রাখবেন না। আলোকচিত্র সাংবাদিকদের প্রায়শই দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার সুযোগ থাকে না। ফলে ভীড়ের মধ্যে থাকার সময় কমিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ। ছবি তুলুন এবং বেরিয়ে যান। 
  • ভীড়ের মধ্যে খুব বেশি সময় না থাকার ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিৎ সব সাংবাদিকদের। কারণ এটি খুব দ্রুত শত্রুভাবাপন্ন হয়ে উঠতে পারে।

পুলিশের টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের আশঙ্কা থাকলে 

  • টিয়ার গ্যাস ব্যবহারে হাঁচি, কাশি, থুথু, কান্না এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টিকারী শ্লেষ্মা তৈরি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ব্যক্তিদের বমি, এবং শ্বাস কষ্ট হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের বাতাসে ছড়িয়ে পড়া জীবাণুর মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যে ব্যক্তিরা হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন, বা যারা কোভিড ১৯-এর ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগে তালিকাভুক্ত, তাদের উচিৎ এ ধরনের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ঘটনা কাভার থেকে বিরত থাকা, যেখানে টিয়ার গ্যাসের ব্যবহার হতে পারে।টিয়ার গ্যাসের সংস্পর্শ এবং এর প্রভাব মোকাবেলার বিষয়ে আরও নির্দেশনার জন্য, অনুগ্রহ করে সিপিজে-এর নাগরিক বিক্ষোভ সংক্রান্ত পরামর্শসমূহ (সিভিল ডিসঅর্ডার অ্যাডভাইজরি) দেখুন। (বাংলায়)

শারীরিক সুরক্ষাঃ আক্রমণ সংক্রান্ত

নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে এর আগে আওয়ামী লীগ এবং তাদের ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগের সদস্যদের কাছে সাংবাদিকদের হামলার শিকার হওয়ার ঘটনাগুলোনথিভুক্ত করেছে সিপিজে।

এ ধরনের আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:

  • যে কোনো ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করার আগে সাংবাদিকদের সম্পর্কে প্রতিবাদকারীদের মেজাজ মূল্যায়ন করুন এবং সম্ভাব্য হামলাকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
  • আক্রমণকারীকে শনাক্ত করতে শারীরিক অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করুন এবং আপনার নিজের শারীরিক অভিব্যক্তি ব্যবহার করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করুন।
  • আক্রমণকারীর সাথে নিবিষ্ট দৃষ্টিতে যোগাযোগ রাখুন, খোলা হাতের অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করুন এবং শান্তভাবে কথা বলুন।
  • বিপজ্জনক ব্যক্তি থেকে অন্তত একটি প্রলম্বিত হাতের দৈর্ঘ্যের সমান দূরত্বে থাকুন। যদি হাত দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয় তাহলে দূরে সরে যান এবং আগ্রাসন ছাড়াই দৃঢ়ভাবে নিজেকে মুক্ত করে দূরে সরে যান। কোণঠাসা হয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় পড়লে, চিৎকার করুন। 
  • আগ্রাসন বেড়ে গেলে, নিজের একটি হাত মুক্ত রাখুন এবং সেটি দিয়ে আপনার মাথার সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এড়াতে ছোট ছোট কিছু সুচিন্তিত পদক্ষেপের মাধ্যমে পেছনে সরে যান। দলবদ্ধ থাকলে একসঙ্গে থাকুন এবং একে অপরের হাত ধরে রাখুন।  
  • আক্রমণের ঘটনা নথিভুক্ত করাও কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিকসুলভ কাজ হতে পারে। তবে পরিস্থিতি এবং নিজের সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। আগ্রাসী ব্যক্তির ছবি তোলা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে  তুলতে পারে।
  • যদি আপনাকে আগ্রাসীভাবে ঘিরে ধরা হয়, তাহলে আততায়ী যায় চায়– তা দিয়ে দিন। সরঞ্জামাদির থেকে আপনার জীবনের মূল্য বেশি।

শারীরিক সুরক্ষা: শত্রুভাবাপন্ন কমিউনিটি থেকে রিপোর্টিং

সাংবাদিকদের মাঝে মাঝে এমন এলাকা বা কমিউনিটি থেকে রিপোর্টিং করতে হয় যারা প্রচারমাধ্যম বা বহিরাগতদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ। এটি ঘটতে পারে যদি একটি কমিউনিটি মনে করে যে প্রচারমাধ্যম তাদের যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে না বা তাদের নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় সাংবাদিকদের এমন কমিউনিটি থেকে দীর্ঘ সময় ধরে রিপোর্টিং করতে হতে পারে– যারা সংবাদমাধ্যমের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে।

  • সম্ভব হলে, সেই কমিউনিটি এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আগে থেকেই গবেষণা করুন। সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে– সে সম্পর্কে বোঝাপড়া তৈরি করুন এবং প্রয়োজন হলে এমনভাবে চলাফেরা করুন, যেন তা কম মনোযোগ আকর্ষণ করে। 
  • কমিউনিটিতে আগে থেকেই কিছু প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করুন। আমন্ত্রণ ছাড়া সেখানে চলে গেলে বা আপনার হয়ে অন্য কেউ কথা বলছে– এমন পরিস্থিতি সমস্যা তৈরি করতে পারে। আপনার যদি সেই এলাকা সম্পর্কে জানাশোনা না থাকে, বা আপনাকে বহিরাগত বলে বিবেচনা করা হয়, তাহলে স্থানীয় কোনো নেতৃস্থানীয় বা সুনামসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিন বা সঙ্গে রাখুন, যিনি সেখানে আপনাকে সঙ্গ দিতে পারবেন এবং আপনার কর্মকাণ্ড সমন্বয়ে সহায়তা করতে পারবেন। একজন স্থানীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তিকেও চিহ্নিত করে রাখুন, যিনি জরুরী পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারেন।
  • যদি সেই কমিউনিটিতে অ্যালকোহল বা মাদকের ব্যবহার হয়ে থাকে, তাহলে সতর্ক থাকুন যে, অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। 
  • আদর্শ উপায় হলো একটি দলের সঙ্গে কাজ করা বা ব্যাকআপ রাখা। ঝুঁকির মাত্রার উপর নির্ভর করে, ব্যাকআপ দলটি আশেপাশে কোনো নিরাপদ স্থানে (যেমন, শপিং মল বা পেট্রোল স্টেশন) অপেক্ষা করতে পারে প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য।
  • এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করুন এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন। ঝুঁকি বেশি হলে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করুন। আপনি যখন কাজে মনোযোগী থাকবেন, তখন কোনো হুমকি তৈরি হলে কেউ যেন আপনাকে এবং আপনার সরঞ্জমাদির সুরক্ষা দিতে পারে– তা নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বিবেচনা করুন। 
  • আপনার গাড়ি এমন জায়গায় রাখুন, যেন যেকোনো মুহূর্তে সেটি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। খুব ভাল হয় যদি গাড়িচালক গাড়ির ভেতরেই থাকেন। 
  • যদি আপনাকে আপনার যানবাহন থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে কীভাবে সেখানে ফিরে যেতে হবে– তা জেনে রাখুন। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সনাক্ত করুন এবং সহকর্মীদের সেসব তথ্য জানিয়ে রাখুন।
  • জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজনে কোথায় যেতে হবে তা জানুন এবং প্রস্থানের কৌশল তৈরি করুন।
  • কোনো ব্যক্তির ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণের আগে সব সময় সম্মতি নিন, বিশেষ করে যদি আপনার প্রস্থানের সহজ পথ না থাকে।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যাওয়া মাত্রই সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ুন। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় সেখানে থাকবেন না। কখন কাজ শেষ করে বেরিয়ে যাবেন– তা আগে থেকে ভেবে রাখা এবং সেই সময় অনুযায়ীই বেরিয়ে পড়া কাজে দেবে। আপনার দলের কোনো সদস্য অস্বস্তি বোধ করলে, সেটি নিয়ে আলোচনায় সময় নষ্ট করবেন না। দ্রুত প্রস্থান করুন।
  • সংবাদমাধ্যম কোম্পানির ব্র্যান্ডিং নেই– এমন উপযুক্ত ও সম্মানসূচক পোশাক পরুন। প্রয়োজনে সরঞ্জাম এবং যানবাহন থেকে সংবাদমাধ্যমের লোগো সরিয়ে ফেলুন । 
  • ব্যবহারবিধি জানা থাকলে একটি মেডিকেল কিট সঙ্গে নিন। 
  • কমিউনিটির ব্যক্তি এবং তাদের বিশ্বাস এবং উদ্বেগের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল থাকুন।
  • সঙ্গে নেয়া মূল্যবান জিনিসপত্র এবং নগদ অর্থের পরিমাণ সীমিত করুন। চোর কিংবা ছিনতাইকারী আপনার সরঞ্জামের  প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে কিনা বিবেচনা করুন। যদি আপনি আক্রান্ত হন তবে তারা যা চায় তা দিয়ে দিন। সরঞ্জামদির চেয়ে আপনার জীবনের মূল্য বেশি।
  • রাতে কাজ করা এড়িয়ে চলুন। কারণ এসময় ঝুঁকি নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।
  • সম্প্রচার বা প্রকাশনার আগে, বিবেচনা করুন যে আপনাকে সেই জায়গায় আবার ফিরে যেতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কাভারেজ কী কোনো প্রভাব ফেলবে? 

অতিরিক্ত রিসোর্সসমূহ/ ব্যবহারযোগ্য উপায়সমূহ 

ডিজিটাল, শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কে আরও জানতে চাইছেন এমন সাংবাদিকগণ  বাংলা ভাষায় নিম্নলিখিত রিসোর্সসমূহ/ব্যবহারযোগ্য উপায়সমূহের সহায়তা নিতে পারেন।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ডিজিটাল সেফটি কিট।

 সাংবাদিকদের জন্য এই নির্দেশিকাটি অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখা থেকে শুরু করে নিরাপদ যোগাযোগের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তার অপরিহার্য বিষয়সমূহ সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা প্রদান করবে।

সাংবাদিকদের জন্য ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড এবং গ্রীনহোস্ট টোটেম ডিজিটাল নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোর্স

দেশের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখে তৈরি এই স্ব-বিন্যস্ত অনলাইন কোর্সগুলি সাংবাদিকদের  বিষয়বস্তু সম্পর্কে অধ্যয়ন করার  এবং তারপর সে বিষয়ে অনলাইন অনুশীলন সম্পন্ন করার সুযোগ দেবে। অধ্যয়নের বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে, তথ্যের উৎস/তথ্য সরবরাহকারীদের সুরক্ষিত রাখা, ফিশিং থেকে রক্ষা করা এবং কীভাবে জরুরী পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে সুস্থ থাকাকে দৃঢ় করা যায়।