সাংবাদিক হত্যা সমস্যা সমাধানের অগ্রগতিকে ব্যর্থ করতে পারে আইনি বিপত্তি

গ্লোবাল ইমপিউনিটি ইন্ডেক্স আলোকপাত করছে সেই দেশগুলির উপর যেখানে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায় সাংবাদিকদের ঘাতকরা

নিউ ইয়র্ক, অক্টোবর ২৮, ২০২০–আইনি পদক্ষেপ ও আবেদন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাবে বিশ্ব জুড়ে গণমাধ্যম কর্মীদের হত্যার ঘটনাকে কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। আজ প্রকাশিত এক নয়া রিপোর্টে এমনটাই জানতে পেরেছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট সংস্থা। ২০২০ গ্লোবাল ইমপিউনিটি ইনডেক্স আলোকপাত করেছে সেই সব দেশের উপর যেখানে প্রায় নিয়মিত ভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিকদের এবং গণমাধ্যম কর্মীদের ঘাতকদের কোনও শাস্তি হয় না। মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায় তারা।

বার্ষিক গ্লোবাল ইমপিউনিটি ইনডেক্সে আবারও শীর্ষ স্থান দখল করেছে সোমালিয়া, সিরিয়া, ইরাক ও দক্ষিণ সুদান। এই দেশগুলিতে ধারাবাহিক যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে আইন-শৃঙ্খলাহীনতা ও হিংসার চাকা ক্রমাগত ঘুরে চলেছে এবং এক ধরনের স্থায়ীত্ব লাভ করেছে। এই ইনডেক্স আরও জানাচ্ছে যে, তুলনামূলকভাবে শান্ত দেশগুলিতে যেখানে অপরাধী, রাজনৈতিক দল, নেতৃস্থানীয় শিল্পপতি ও অন্যান্য ক্ষমতাধর কর্তাব্যক্তিরা তদন্তমূলক সাংবাদিকতাকে চুপ করিয়ে দিতে আশ্রয় নিচ্ছে হিংসার। পাকিস্তান, মেক্সিকো ও ফিলিপিন্সের মতো দেশগুলিতে দুর্নীতি, দুর্বল প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব দৃঢ় তদন্তের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে। ফলত এই দেশগুলিতে অপরাধীরা শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে অহরহ। এমনটাই জানতে পেরেছে সিপিজে।

সিপিজের অ্যাডভোকেসি অধিকর্তা কুর্টনি র‍্যাশ বলেছেন,”সাংবাদিক হত্যার সংখ্যা কম হওয়া সত্ত্বেও, ঘাতকদের শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যাওয়ার ঘটনা রয়েই যাচ্ছে। যে দেশগুলিকে যথেষ্ট স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক মনে করা হয় সেখানেও দেখা যাচ্ছে এমন ঘটনা।” তিনি আরও বলেছেন,”মসৃণভাবে বিচার দাবি করা ও দীর্ঘ দিন ধরে আটকে থাকা মামলার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিগৃহীতদের পরিবার ও সহকর্মীদের কাছে ঋণী বিশ্বের নেতারা। সেই সঙ্গে ঘাতকরা আইনি ফাঁকফোকর গলে মুক্ত ঘুরে বেড়াতে পারবে না, এই বিষয়টি নিশ্চিত করতেও এঁদের কাছে ঋণ রয়ে যাবে।”

২০২০ সালে যে ঘটনাগুলিতে উল্লেখযোগ্য ধাক্কা বা বিপত্তি হয়েছে সেগুলি ইনডেক্সের গণনায় সরাসরি স্থান পায়নি। ২০০২ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক রিপোর্টার ড্যানিয়েল পার্লকে হত্যা করা হয় পাকিস্তানে। চার জন অপরাধী সাব্যস্ত হন। কিন্তু সিন্ধ হাইকোর্ট এপ্রিল মাসে ওই চার জনের মৃত্যদণ্ড বানচাল করে দেয়। আবার সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিয়ার বেলগ্রেড অ্যাপিল আদালত ঘোষণা করে যে, চার প্রাক্তন নিরাপত্তা আধিকারিকের রায় বদলে দেওয়া হল। এই চার প্রাক্তন নিরাপত্তা আধিকারিক ১৯৯৯ সালে সাংবাদিক স্লাভকো কুরুভিয়াকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন। রয়েছে মেক্সিকোর প্রহসন। সেখানকার বিশেষ ফেডারেল প্রসিকিউটর নতুন করে সাংবাদিক হত্যার কোনও মামলা গ্রহণ করেন নি। মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি আন্দ্রে ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরের শাসন আমলেই এই ঘটনা।

২০১৯ সালে এই ইনডেক্সে খারাপতম দেশের তালিকায় ফিলিপিন্সের স্থান ছিল পঞ্চম। এ বছর এই দেশ এসে দাঁড়িয়েছে সপ্তমে। ২০০৯ সালের নভেম্বরে আম্পাতুয়ান, ম্যাগুইন্দানাও, ৩২ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপর যে তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছিল সেটি এই হিসাবের বাইরে রয়ে গিয়েছে কেননা ইনডেক্স যে সময়কাল নিয়ে কাজ করেছে এই ঘটনাগুলি তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাই তার এই পাঁচ থেকে সাতে যাওয়া। এই মামলায় ২০১৯ রুলিংকে স্বাগত জানানো হয়েছিল, কিন্তু বিচার চলল ১০ বছর ধরে এবং আসামিরা আপিল করেই চলেছে।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধকে খতম করতে ও ঘাতকদের শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাওয়া রুখতে লড়াই করে আসছে সিপিজে। আন্তর্জাতিক অব্যাহতি সমাপ্তি দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল ডে টু এন্ড ইমপিউনিটি চালু করতে সিপিজে বরাবরই সরব হয়েছে। হত্যার যাতে যথার্থ বিচার হয় সেই জন্য গ্লোবাল ক্যাম্পেন এগেন্সট ইমপিউনিটি বা অব্যাহতির বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রচার চালিয়ে আসছে এই সিপিজে। সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার আগে কী ধরনের বিপদ বা হুমকি ছিল সেই তথ্য প্রকাশ করতে মার্কিন ইন্টেলিজন্স সংস্থার কাছে আবেদন করে একটি মামলার নেতৃত্ব দিচ্ছে সিপিজে।

প্রতি বছর ২ নভেম্বর প্রকাশিত হয় গ্লোবাল ইমপিউনিটি ইনডেক্স। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধকে নিশ্চিহ্ন করতে ইন্টারন্যাশনাল ডে টু এন্ড ইমপিউনিটি বা আন্তর্জাতিক ইমপিউনিটি সমাপ্তি দিবসকে গুরুত্ব দিয়ে এই ইনডেক্সের প্রকাশ। প্রতিটি দেশের জনসংখ্যার হারের সঙ্গে অমীমাংসিত সাংবাদিক হত্যার সংখ্যা ও হারকে গণনা করে সিপিজে। মান্য পদ্ধতিবিদ্যা বা মেথডোলজি অনুযায়ী করা হয় এই গণনা। ২০১০ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সাংবাদিক হত্যার ঘটনাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছে সিপিজে। এই কাজ করা হয়েছে ইনডেক্সের জন্যই।

”গেটিং অ্যাওয়ে উইথ মার্ডার : সিপিজে’স ২০২০ গ্লোবাল ইমপিউনিটি ইনডেক্স” শীর্ষক রিপোর্ট পেতে  এবং সিপিজে’স গ্লোবাল ক্যাম্পেন এগেন্সট ইমপিউনিটি সম্বন্ধে তথ্য পেতে যান আমাদের ওয়েবসাইটে। অনুবাদ পাওয়া যাবে আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, পর্তুগিজ, রাশিয়ান, সার্বিয়ান ও সোমালি ভাষায়। সিপিজের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মেইল করুন এই ঠিকানায় : [email protected]