ভারতের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন ২০২১ : সাংবাদিক নিরাপত্তা নির্দেশিকা

পূর্ব ভারতের বিহার রাজ্যের পালিগঞ্জে বিধানসভা নির্বাচনের সময় একটি ভোট কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভোটাররা। ২৮ অক্টোবর, ২০২০। ২০২১ সালের এপ্রিল ও মে মাসে ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়েছে। ( এপি / আফতাব আলম সিদ্দিকী )

২০২১ সালের মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে ভারতের অসম, কেরল, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ ও পুদুচেরিতে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে।

এই নির্বাচন কভার করতে যাওয়া গণমাধ্যম কর্মীদের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। যেমন শারীরিক নিগ্রহ, হুমকি ও হেনস্থা ; অনলাইনে বুলি করা ; কোভিড-১৯-এ সংক্রমণ ; গ্রেফতার ও আটক ; এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করা সহ প্রতিবেদন তৈরিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। সিপিজের গবেষণা অনুযায়ী, অন্তত দুই জন সাংবাদিক ২০২০ সালে ভারতে কাজ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন। 

কেরলের দ্য ফেডারেল নিউজ ওয়েবসাইটে কর্মরত সহযোগী সম্পাদক শাহিনা কে কে সিপিজেকে ফোন মারফত জানিয়েছেন, ”সাধারণত, রিপোর্ট করার সময় কী ধরনের বিপদের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই বিষয়ে নিউজ এডিটর বা ব্যুরো চিফেরা রিপোর্টারদের কিছু বলেন না। সামনে কী হবে তা বোঝার মতো ব্যবস্থা আমাদের নেই এবং এই ধরনের বিপদকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তার পরিকল্পনা করার ব্যবস্থাও নেই। রিপোর্টাররা শুধু [ মাঠে নেমে পড়েন।]”

নির্বাচন কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের জন্য সিপিজের এমার্জিন্সি বিভাগ নিরাপত্তা নির্দেশিকা আপডেট করেছে। বিধানসভা নির্বাচনের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে সেই বিষয়ে সম্পাদক, রিপোর্টার ও চিত্র সাংবাদিকদের জন্য তথ্য রয়েছে এতে। পাশাপাশি রয়েছে কীভাবে ডিজিটাল, শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব সেই বিষয়ক তথ্য।

আপনি নির্বাচনী সুরক্ষা গাইডের পিডিএফ বাংলায় ডাউনলোড করতে পারেন।

যোগাযোগ ও সূত্র

সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সাংবাদিকরা emergencies@cpj.org মারফত সিপিজের এমার্জেন্সি বিভাগে অথবা সিপিজের এশিয়া প্রোগ্রামের সিনিয়র গবেষক আলিয়া ইফতিখারকে aiftikhar@cpj.org অথবা ভারতীয় করসপন্ডেন্ট কুনাল মজুমদারকে kmajumder@cpj.org ঠিকানায়  যোগাযোগ করতে পারেন।

এর পাশাপাশি, সিপিজের রিসোর্স কেন্দ্রের অতিরিক্ত তথ্য ও উপকরণ রয়েছে অ্যাসাইনমেন্টের আগে প্রস্তুতি ঘটনা পরবর্তী সহযোগিতার জন্য।

ভারতের নয়া দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে কাজ করছেন সাংবাদিকরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭। ( এপি / আলতাফ কাদরি )

 সম্পাদকের নিরাপত্তা চেকলিস্ট

বিধানসভা নির্বাচনের সময় বা পরে খুব অল্প সময়ের নোটিসে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে পাঠাতে পারে সম্পাদকরা বা নিউজরুম কর্তারা। কর্মীদের ঝুঁকি কমাতে এই চেকলিস্টে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও ধাপ যা মাথায় রাখা দরকার।

কর্মীদের জন্য বিবেচনা

সরঞ্জাম ও পরিবহণ

সাধারণ বিবেচনা

 ঝুঁকির পরিমাণ ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য দেখুন সিপিজে রিসোর্স সেন্টার

২০২০ সালের ৬ নভেম্বরে তোলা এই আলোকচিত্রে ভারতের মুম্বইয়ে একজন ফোন ব্যবহারকারী ফেসবুকের হোয়াটঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটি নিজের মোবাইল ফোনে আপডেট করছেন। ( এএফপি / ইন্দ্রনীল মুখার্জি )

ডিজিটাল নিরাপত্তা : প্রাথমিক প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি

নির্বাচন কভার করার সময় রিপোর্টিং করার জন্য বা প্রতিবেদন ফাইল করতে এবং সহকর্মীদের ও সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়। যদি সাংবাদিকদের আটক করা হয় এবং তাদের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয় বা ভেঙে দেওয়া হয় তাহলে এর ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তাই অ্যাসাইনমেন্টের উদ্দেশে বেরনোর আগে কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখা ভালো :

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য অনুগ্রহ করে দেখুন সিপিজের ডিজিটাল সেফটি গাইড


ডিজিটাল নিরাপত্তা : উপাদান সংগ্রহ ও সঞ্চয়

নির্বাচনের সময় উপাদান সংগ্রহ করা ও সঞ্চয় করার ব্যাপারে যথার্থ নিয়ম মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনও সাংবাদিককে আটক করা হয়, তার ডিভাইজ নিয়ে নেওয়া হতে পারে এবং সেটা সার্চ করে দেখা হতে পারে। এতে সাংবাদিক ও তার সোর্সের জন্য মারাত্মক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। নির্বাচন কভার করতে গেলে ডিভাইস ভেঙে যেতে পারে বা চুরি হয়ে যেতে পারে। যদি না এর ব্যাক আপ নেওয়া না থাকে তাহলে প্রচুর তথ্য হারিয়ে যেতে পারে।

নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি আপনাকে ও আপনার তথ্যকে নিরাপত্তা দিতে সাহায্য করতে পারে:


 ডিজিটাল নিরাপত্তা: নিরাপদতর যোগাযোগ

নিরাপদ ভাবে অন্যদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ বজায় রাখা যায় তা জানাই হল আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশেষত, বহু সাংবাদিক কোভিড-১৯-এর জন্য দূর দূরান্তে গিয়ে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করছেন। ব্যক্তিগত ভাবে আলোচনার পরিবর্তে সাংবাদিক ও সম্পাদকরা বহুলাংশে কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করছেন এবং কর্মী ও সোর্সদের নিরাপত্তার জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এই ব্যাপারে এই কল ও ওয়েবিনারগুলি অ্যাকসেস করা খুবই জরুরি।

যদি জুম ব্যবহার করা হয় :

যখন জুম ব্যবহার করছেন তখন নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে নিম্নলিখিত নির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হল:

 ডিজিটাল নিরাপত্তা : অনলাইন হয়রানি, ট্রোলিং ও ভুল তথ্য দিয়ে প্রচার

নির্বাচনের সময় নিশানা করে অনলাইন প্রচার সহ অনলাইন হেনস্থা ও হয়রানি বাড়তে পারে। গণমাধ্যম কর্মীরা প্রায়ই অনলাইন আক্রমণকারীদের দ্বারা নিশানা হয়। এই অনলাইন আক্রমণকারীরা সাংবাদিক ও তাদের কাজের মর্যাদাহানি করতে চায়। এমনকি এটাও প্রায় ঘটে যে, অনেকে মিলে হয়রান করা ও ভুল তথ্য দিয়ে প্রচার করা। যার ফলে সাংবাদিক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে অপারগ হয়ে পড়ে এবং জরুরি ভিত্তিতে অফলাইনে চলে যেতে বাধ্য হয়। এই ভাবে ভারতে অনলাইনে বহু মহিলা সাংবাদিককে ট্রোল ও হেনস্থা করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা সম্পর্কে সিপিজে ওয়াকিবহাল। অনলাইন আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা সহজ কাজ নয়। যাইহোক, কয়েকটি ধাপ রয়েছে যেগুলি মেনে চললে সাংবাদিকরা নিজেদের অ্যাকাউন্ট ও নিজেদেরকে আরও ভালো ভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারবে।

নিজেকে ভালো ভাবে সুরক্ষিত রাখা :

অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা

আপনাকে নিশানা ও হেনস্থা করতে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইন হেনস্থাকারীরা প্রায়ই ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করবে। আপনার অ্যাকাউন্ট ও আপনার তথ্য আরও ভালো ভাবে সুরক্ষিত রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করুন।

আক্রমণের সময়: 

নয়া দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট করছেন সাংবাদিক বরখা দত্ত (সি)। ২০২০ সালের ১২ জুনে। সংক্রামক কোভিড-১৯-এর জন্য চাপানো বিধি নিষেধ কর্তৃপক্ষ শিথিল করে দেওয়ার পর।

শারীরিক নিরাপত্তা : কোভিড-১৯ বিষয়ক বিবেচনা

কোনও নির্বাচনী ইভেন্টে বা এই সম্পর্কিত প্রতিবাদ আন্দোলনে শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে চলা খুবই কষ্টসাধ্য। বিশাল ভিড় খুবই সাধারণ ব্যাপার। সাধারণ জনগণ মুখের আবরণী / ফেস মাস্ক নাও পরতে পারে এবং একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে ঠাসাঠাসি করে মিডিয়া কর্মীদের আবদ্ধ থাকতে হতে পারে। এই ধরনের বদ্ধ হয়ে থাকার ফলে ভাইরাসের ড্রপলেট ছড়িয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এরই পাশাপাশি বিরূপ মনোভাবাপন্ন জনতা মৌখিক বা শারীরিক ভাবে আক্রমণ করতে পারে। তারা ইচ্ছা করেই মিডিয়া কর্মীদের উপর হেঁচে ও কেশে দিতে পারে।

সতর্ক থাকুন যে, চিৎকার করা বা হল্লা করা মানুষদের থেকে ভাইরাসের ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা ও সম্ভাবনা মিডিয়া কর্মীদের ক্ষেত্রে বেড়ে যাচ্ছে।

আরও বিস্তারিত কোভিড-১৯ রিপোর্টিং নির্দেশনার জন্য অনুগ্রহ করে দেখুন সিপিজের নিরাপত্তা বিধি, এখানে

ভারতের কলকাতায় বামপন্থী ছাত্র দলের নেতৃত্বে চলা মিছিলে পুলিশের অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে কংগ্রেস দলের সমর্থকরা। ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে। ( এপি / বিকাশ দাস )

শারীরিক নিরাপত্তা : নির্বাচনী মিছিল ও আন্দোলন থেকে রিপোর্টিং

নির্বাচনের সময়, ভিড়ে ঠাসা মিছিল, প্রচার অনুষ্ঠান, লাইভ ব্রডকাস্ট ও আন্দোলনে প্রায়শই যান মিডিয়া কর্মীরা। এই ধরনের ইভেন্টে ঝুঁকি কমাতে মিডিয়া কর্মীদের নিম্নলিখিত নিরাপত্তামূলক পরামর্শগুলি বিবেচনায় রাখা উচিত: 

রাজনৈতিক সভা ও মিছিল

আন্দোলন  

পরিকল্পনা: 

সতর্কতা ও অবস্থান: 

ভারতের গুয়াহাটিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতায় আন্দোলনরত প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করছে পুলিশ। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে। ( এপি / অনুপম নাথ )

যদি পুলিশের দ্বারা কাঁদানে গ্যাস ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে

কাঁদানে গ্যাস ব্যবহারের ফলে হাঁচি, কাশি, থুতু, কান্না ও মিউকাস তৈরি হতে পারে যার ফলে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু ক্ষেত্রে, কেউ বমি করতে পারে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। এই ধরনের উপসর্গ মিডিয়া কর্মীদের বাতাসে ভাসমান ভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। অ্যাসথামার মতো শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় যারা ভুগছেন এবং যারা কোভিড-১৯ দুর্বলতা বিভাগে তালিকাভুক্ত তাদের ভিড়ে ঠাসা ইভেন্ট ও আন্দোলন কভার করতে না যাওয়া উচিত এবং কাঁদানে গ্যাস যদি ব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেই ইভেন্ট এড়িয়ে চলা উচিত। 

পাশাপাশি, প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে, করোনাভাইরাসের মতো প্যাথোজেনের সংক্রমণের পরিমাণ প্রকৃত পক্ষে বাড়িয়ে দিতে পারে কাঁদানে গ্যাস, এমনটাই আলোকপাত করেছে এনপিআর

কাঁদানে গ্যাসের সংস্পর্শে আসা ও তার ফলাফল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত নির্দেশিকার জন্য অনুগ্রহ করে দেখুন সিপিজের গণ বিশৃঙ্খলা নির্দেশিকা। 

শারীরিক নিগ্রহ: 

ভারতে আন্দোলনকারীরা আগে সাংবাদিকদের নিগ্রহ করেছে। যখন আগ্রাসী পরিস্থিতি ডিল করবেন তখন নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনায় রাখুন: 


শারীরিক নিরাপত্তা: বিরূপ মনোভাবাপন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে রিপোর্টিং

মিডিয়া বা বহিরাগতদের প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন এলাকা বা সম্প্রদায়ের মধ্যে গিয়ে অনেক সময় সাংবাদিকদের রিপোর্টিং করার প্রয়োজন পড়ে। এটা ঘটতে পারে যদি ওই সম্প্রদায় মনে করে যে মিডিয়া নিরপেক্ষ ভাবে তাদের কথা তুলে ধরে না বা তাদের নেতিবাচক ভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে। নির্বাচনী প্রচারের সময়, মিডিয়ার প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হতে পারে সাংবাদিকদের। 

বিপদ কমাতে: 

Exit mobile version