বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ২০২৪: সাংবাদিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নির্দেশিকা

১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের ঢাকার একটি রাস্তায় প্রদর্শিত স্থানীয় সংবাদপত্র পড়ছেন পথচারীরা। (এএফপি/মুনির উজ জামান)

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। নির্বাচনের সম্ভাব্য বৈধতা সংক্রান্ত নানা রকম প্রশ্নেরমধ্যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এবং দলগুলোর ভেতরে সংঘর্ষের প্রবণতা এরই মধ্যে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এবং সাংবাদিকেরা প্রায়ই এসব সংঘর্ষের মাঝামাঝিতে পড়ে যাচ্ছেন। সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কায় নির্বাচনের আগ দিয়ে, বিপুল পরিমাণ শটগান বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও স্নাইপার রাইফেল কিনেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

সিপিজে’র গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দুর্ভাগ্যবশত একটি সাধারণ ঘটনা, বিশেষ করে যারা রাজনীতি বা নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়গুলো কাভার করেন। ২০২৩ সালের জুন মাসে, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক আঞ্চলিক নেতাকে নিয়ে ধারাবাহিক কিছু প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয় জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে। সিপিজে ২০২৩ সালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার এমন বেশ কিছু ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরায় বসবাসরত সাংবাদিক রঘুনাথ খা-কে গ্রেপ্তার এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে নির্যাতন করার অভিযোগ এবং রাঙ্গুনিয়া-ভিত্তিক সাংবাদিক আবু আজাদকে অপহরণ ও গুরুতর মারধর। 

দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় মামলার শিকার হওয়া সাংবাদিকেরা গ্রেপ্তার ও জোরপূর্বক গুমের মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। এর পাশাপাশি ছিল রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের অভিযোগ। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে, সরকার ঘোষণা করেছিল যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি একটি নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। যদিও মানবাধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন যে, ভিন্নমত দমনের জন্য এই আইনটির ব্যবহারও অব্যাহত থাকবে। গত সেপ্টেম্বরে এই সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিস্থিতি বোঝার জন্য ১৮ জন বাংলাদেশী সাংবাদিকের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে সিপিজে। সেখানে দেখা গেছে :

নির্বাচন কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকেরা একটি ক্রমবর্ধমান বিপজ্জনক পরিবেশে রয়েছেন। এ কারণে আমরা সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য এই রিসোর্সগুলো এক জায়গায় করেছি, যেন তাঁরা খবর সংগ্রহ ও প্রকাশের কাজে যাওয়ার সময় এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে পারেন এবং সেগুলো কমিয়ে আনতে পারেন।

যোগাযোগ ও রিসোর্স

সহায়তার প্রয়োজন হলে সাংবাদিকেরা সিপিজের ইমার্জেন্সিতে যোগাযোগ করতে পারেন এই ইমেইলে emergencies@cpj.org, এবং সিপিজের সুরক্ষা সংক্রান্ত রিসোর্স ব্যবহার করতে পারেন +১ ২০৬ ৫৯০ ৬১৯১ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের মাধ্যমে। 

এছাড়াও, অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি সংক্রান্ত বাড়তি তথ্য ও টুল এবং সংবাদ কাভারের সময় ও তার পরে অন্যান্য সহায়তার জন্য সাংবাদিকেরা দেখতে পারেন সিপিজে-র রিসোর্স সেন্টার

সম্পাদকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চেকলিস্ট

নির্বাচনের আগে-পরে অথবা চলার সময় সাংবাদিকদের খুবই অল্প সময়ের নোটিশে কোনো সংবাদ কাভার করতে পাঠাতে পারেন সম্পাদকেরা। এসময় কর্মীদের ঝুঁকি কমানোর জন্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করতে হবে– তার একটি চেকলিস্ট থাকছে এখানে।

মনে রাখতে হবে যে, সাংবাদিকেরা নজরদারির সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতির লক্ষ্যবস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে আইএমএসআই (IMSI) ক্যাচার, যেটি মোবাইল ফোন যোগাযোগে আড়ি পাতার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং অত্যাধুনিক ট্র্যাকিং সফটওয়্যার যুক্ত নজরদারি ভ্যান ব্যবহৃত হয় সেল ফোনকে লক্ষ্য করে। হারেৎজ এবং আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনকে টার্গেট করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ক্রয় করেছে এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি সেলব্রাইট থেকে সংগ্রহ করা সফটওয়্যার যা ফোন হ্যাক করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। সেইসাথে পিসিক্স (Picsix)০-এর তৈরি একটি নজরদারি ও হ্যাকিং সিস্টেম যা ফোনের নেটওয়ার্ক ও ট্রান্সমিশন আটকাতে ব্যবহার করা  হতে পারে।

কর্মী বিবেচনাসমূহ

সরঞ্জাম এবং পরিবহন সংক্রান্ত

সাধারণ বিবেচ্য বিষয়সমূহঃ

আরও তথ্যের জন্য ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে সিপিজে’র রিসোর্স সেন্টার দেখুন।

২৮ জুলাই, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থকরা বাংলাদেশের ঢাকায় একটি প্রতিবাদ সমাবেশে স্লোগান দিচ্ছেন। (এপি/মাহমুদ হোসেন অপু)

ডিজিটাল সুরক্ষাঃ প্রাথমিক প্রস্তুতিসমূহ

নির্বাচন কাভার করার সময়, সাংবাদিকেরা বিস্তৃত পরিসরের হুমকির মুখে পড়তে পারেন, যার মধ্যে আছে ডিভাইস জব্দ, ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগে নজরদারি, বেশি মাত্রায় অনলাইন হয়রানি, এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। নিচের এই দিকনির্দেশনাগুলো সাংবাদিকদের আরও বেশি  নিরাপদ থাকতে সাহায্য করবে।

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু করে আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলি সুরক্ষিত করুন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টগুলো হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে৷ বেশিরভাগ অনলাইন অ্যাকাউন্টের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সেটিংস বিভাগে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করার ব্যবস্থা থাকে। একবার সক্রিয় হয়ে গেলে, আপনার অ্যাকাউন্টে লগ ইন করার জন্য ইমেইল ও পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি আপনাকে একটি কোডও দিতে হবে। এই কোডটি পেতে আপনি অথি (Authy)-এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের (2FA) সুবিধা দেয়– এমন যেকোনো অনলাইন পরিষেবার একটি ব্যাকআপ কোড ব্যবহার করার সুবিধাও থাকে। টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ফর্ম ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার মতো পরিস্থিতি না থাকলে এই ব্যাকআপ কোড ব্যবহার করুন। ফোন বা অ্যাপে কোড আসার পরিবর্তে আপনি ব্যবহার করতে পারেন এসব এককালীন কোড। নিশ্চিত করুন যে আপনি এই ব্যাকআপ কোডগুলির একটি অনুলিপি রাখছেন ৷ আপনি এগুলো প্রিন্ট দিয়ে বা লিখে রেখে নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারেন।

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA)  ব্যবহার করার পাশাপাশি, আপনার প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য ১৫টির বেশি অক্ষরের দীর্ঘ পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। আপনার পাসওয়ার্ড যত দীর্ঘ হবে, অ্যালগরিদম ব্যবহার করে বা অনুমান করে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা তত বেশি কঠিন হবে ।

আপনার পাসওয়ার্ড হতে পারে সংখ্যা, চিহ্ন এবং অক্ষরের সংমিশ্রণ, অথবা কিছু শব্দের সংকলন যা একে অপরের সঙ্গে কোনভাবে সম্পর্কিত নয়, যেমন elephanticecreamswimmingtelephone। পাসওয়ার্ড পুনঃব্যবহার করবেন না বা আপনার পাসওয়ার্ডে ব্যক্তিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করবেন না যা সহজেই অনলাইনে পাওয়া যায়, যেমন আপনার জন্ম তারিখ।

বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্যবহারের পাসওয়ার্ড তৈরি, সংরক্ষণ ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণের জন্য একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন। আপনার জন্য কোন পাসওয়ার্ড ম্যানেজারটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা দেখতে সব পাসওয়ার্ড ম্যানেজার নিয়ে একটু গবেষণা করুন৷ আপনার পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের জন্য একটি দীর্ঘ অনন্য পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। আপনি যদি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে না পারেন, তাহলে আপনার পাসওয়ার্ডগুলো কোথাও লিখে রাখুন এবং সেগুলিকে নিরাপদে সংরক্ষণ করুন। তবে যারা প্রচুর ভ্রমণ করেন, কিংবা যাদের আটক হওয়ার বা বাড়িতে তল্লাশি চালানোর ঝুঁকি আছে– এমন সাংবাদিকদের জন্য এটি নিরাপদ বিকল্প নাও হতে পারে।

আপনার প্রতিটি অ্যাকাউন্টের “অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভিটি” বিভাগ নিয়মিত পর্যালোচনা করুন। এটি সাধারণত “সেটিংস” বিভাগে পাওয়া যায়। এটি আপনাকে জানাবে যে, অচেনা কোন  ডিভাইস থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে লগ ইন করা হয়েছে কিনা। আপনার অচেনা কোনো ডিভাইস থেকে যদি কোনো অ্যাকাউন্টে লগ ইন করা দেখেন, তাহলে উচিত হবে অবিলম্বে সেই নির্দিষ্ট ডিভাইস থেকে আপনার অ্যাকাউন্ট লগ আউট করা। নিজের কাছে রেকর্ড রাখার জন্য লগ আউট করার আগে সেটির একটি স্ক্রিনশট নিয়ে রাখতে পারেন।

একাধিক মানুষ ব্যাবহার করে এমন কম্পিউটার থেকে আপনার অ্যাকাউন্টগুলোতে  প্রবেশ করা এড়িয়ে চলুন, উদাহরণ হিসেবে, একটি ইন্টারনেট ক্যাফের কথা বলা যায়৷ যদি আপনার কোনো বিকল্প না থাকে, তাহলে কাজ শেষে অবিলম্বে লগ আউট করুন এবং আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস মুছে ফেলুন।

সহকর্মী বা সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগের সময় হোয়াটসঅ্যাপ বা সিগন্যালের মতো এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং পরিষেবাগুলি ব্যবহার করুন৷ প্রয়োজন হলে, বার্তাগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে মুছে ফেলার ব্যবস্থা করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনার মেসেজিং অ্যাকাউন্ট একটি পিন লক দিয়ে সুরক্ষিত আছে।

পূর্ববর্তী নির্বাচনের সময়গুলোতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেটের গতি কমানোর নির্দেশ দিয়েছিল যা সাংবাদিকদের প্রতিবেদন তৈরি ও পাঠানো অথবা সোর্স ও সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করার সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছিল।

ফলে এরকম আংশিক ইন্টারনেট শাটডাউনের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন– তা নিয়ে আপনার নিউজরুমের সঙ্গে একটি পরিকল্পনা করুন। কীভাবে এবং কখন আপনারা সামনাসামনি দেখা করবেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার না করেই সম্পাদকদের কাছে তথ্য ও নথিপত্র হস্তান্তর করবেন– সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করুন। ল্যান্ডলাইন যোগাযোগের বিস্তারিত আদান-প্রদান করার কথা বিবেচনা করুন, তবে সচেতন থাকুন যে ল্যান্ডলাইন কল অনিরাপদ এবং সংবেদনশীল কথোপকথনের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।

ব্লক হওয়া সাইটগুলোতে প্রবেশ করার জন্য আপনার ডিভাইসে একটি ভিপিএন (VPN) ইনস্টল করুন৷ ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করবার ক্ষেত্রে স্থানীয় আইন নিয়ে কিছুটা গবেষণা করুন, যেহেতু কিছু দেশে এটি বেআইনি। এছাড়া ইতিপূর্বে আংশিক ইন্টারনেট বন্ধের সময় কোন ভিপিএন (VPN) সবচেয়ে ভাল কাজ করেছে– সে ব্যাপারে খোঁজ করুন।

আরও তথ্যের জন্য ইন্টারনেট বন্ধের প্রস্তুতি সম্পর্কে সিপিজে-এর নিরাপত্তা নোট পড়ুন (পাওয়া যায় বাংলাতেও)।

ডিজিটাল সুরক্ষাঃ ডিভাইস সুরক্ষিত করুন

সাংবাদিকরা প্রতিবেদন এবং ফাইল শেয়ার করার পাশাপাশি সহকর্মী এবং তথ্যদাতার সাথে যোগাযোগের জন্য সাধারণত তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডিজিটাল সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়। বিশেষ করে যদি সাংবাদিকদের আটক করা হয় এবং তাদের ফোন জব্দ বা ভেঙে ফেলা হয়। ফলে অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার আগে, নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ:

● আপনার ফোন বা কম্পিউটারে কোন ধরনের তথ্য আছে এবং আপনাকে আটক করা হলে বা আপনার ডিভাইসটি নিয়ে অনুসন্ধান করা হলে তা কীভাবে আপনাকে বা অন্যদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে তা জানুন।

● রিপোর্টিংয়ের কাজে যাওয়ার আগে, ক্লাউডে বা এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভে আপনার ফোনে থাকা তথ্যের ব্যাক আপ রাখুন। আপনি যে ডিভাইসটি বহন করছেন তা থেকে যেকোনো সংবেদনশীল বা ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন কাজের নথিপত্র এবং পরিবারের সদস্যদের ছবির অ্যাক্সেস বন্ধ বা সীমিত করুন।

● রিপোর্টিংয়ের সময় আপনি যেসব অ্যাকাউন্ট ও অ্যাপ ব্যবহার করবেন না– সেগুলো থেকে লগ আউট করুন এবং সেগুলো আপনার ফোন থেকে সরিয়ে ফেলুন। বিভিন্ন ব্রাউজার থেকে লগ আউট করুন এবং আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস মুছে দিন। আপনার ফোন কেড়ে নেওয়া হলে এবং অনুসন্ধান করা হলে এটি আপনার অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রবেশ করা থেকে আরও ভালভাবে সুরক্ষা দেবে। 

● রিপোর্টিংয়ে যাওয়ার আগে আপনার সব ডিভাইসকে পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত করুন এবং দূর থেকে তথ্য মুছে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা (রিমোট ওয়াইপ) চালু করুন। এই রিমোট ওয়াইপ শুধুমাত্র একটি ইন্টারনেট সংযোগের সাপেক্ষেই কাজ করবে। আপনার ফোন আনলক করতে বায়োমেট্রিক্স, যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন, কারণ আপনাকে আটক করা  হলে এটি আপনার ডিভাইসে প্রবেশেধিকার সহজ করে দিতে পারে।

● যতটা সম্ভব কম ডিভাইস সঙ্গে রাখুন। আপনার কাঝে অতিরিক্ত ডিভাইস থাকলে আসাইনমেন্টে সেগুলো সঙ্গে নিয়ে যান এবং ব্যক্তিগত বা কাজের ডিভাইসগুলোকে রেখে যান।

● আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, তাহলে এনক্রিপশন চালু করার কথা বিবেচনা করুন। নতুন আইফোনগুলিতে শুরু থেকেই এনক্রিপশন চালু থাকে। এনক্রিপশন ব্যবহার সংক্রান্ত আইনগুলো দেখে নিন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, অনুগ্রহ করে সিপিজে-এর ডিজিটাল নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেখুন (যেটি বাংলাতেও পাওয়া যায়)।

২৮ জুলাই, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বাংলাদেশের ঢাকায় একটি শান্তি সমাবেশের জন্য জড়ো হওয়ার সময় স্লোগান দিচ্ছেন। (এপি/মাহমুদ হোসেন অপু)

ডিজিটাল সুরক্ষাঃ অনলাইন হয়রানি এবং ভুল তথ্য প্রচারণা

নির্বাচনের সময় টার্গেটেড অনলাইন প্রচারণাসহ অনলাইন হয়রানি বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা প্রায়ই অনলাইন আক্রমণকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হন, যারা সাংবাদিক এবং তাদের কাজকে হেয় করতে চায়। এটি প্রায়শই হতে পারে সমন্বিত হয়রানি এবং ভুল তথ্য প্রচারের ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে, যার ফলে সাংবাদিকেরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন না, এবং তাদেরকে অফলাইনে থাকতে বাধ্য হতে হয়। অনলাইন আক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার কাজটি সহজ নয়। তবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সাংবাদিকেরা নিজেদের এবং তাদের অ্যাকাউন্টগুলিকে আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত করতে পারেন।

অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা

অনলাইন হয়রানিকারীরা প্রায়ই আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে আপনাকে টার্গেট এবং হয়রানি করতে পারে। আপনার অ্যাকাউন্ট ও তথ্য আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিন:

আক্রমণের সময়

ডিজিটাল সুরক্ষাঃ উপকরণ সুরক্ষিত ও সংরক্ষণ করা

নির্বাচনের সময় উপকরণ সংরক্ষণ এবং সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি ভালো প্রোটোকল থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো সাংবাদিককে আটক করা হয়, তবে তাদের ডিভাইসগুলো নিয়ে যাওয়া এবং তল্লাশি চালানো হতে পারে, যা সাংবাদিক এবং তাদের তথ্যদাতাদের জন্য গুরুতর পরিণতি বয়ে আনতে পারে। নির্বাচন কাভার করার সময় ডিভাইসগুলো ভাঙা বা চুরিও হতে পারে। যার ফলে তথ্য হারিয়ে যেতে পারে যদি ভালোভাবে ব্যাক আপ না রাখা হয়।

৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট দেবার পর প্রচারমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন। (এএফপি/ইন্দ্রনীল মুখার্জি)

শারীরিক নিরাপত্তা: গ্রেপ্তারআটক এবং অপহরণ

২০১৯ সালের জানুয়ারীতে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক হেদাইত হোসেন মোল্লাকে এই অভিযোগে গ্রেপ্তার করে যে, তিনি সাধারণ নির্বাচনের সময় খুলনা থেকে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা সম্পর্কে “মিথ্যা তথ্য” প্রদান করে প্রতিবেদন করেছিলেন।

আপনি যদি এমন একটি অ্যাসাইনমেন্টে থাকেন যেখানে গ্রেপ্তার বা আটকের অধিক সম্ভাবনা আছে, তাহলে আপনাকে আগে থেকেই নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:

● আপনার অফিস, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার একটি ব্যবস্থা তৈরি করুন। তাদের জানান যে আপনি কখন কখন যোগাযোগ করার পরিকল্পনা করছেন, কতক্ষণ বিলম্ব হলে তা উদ্বেগজনক  এবং কোন সময়ে তারা আপনার ফিরে আসার আশা করতে পারেন।

● সর্বদা নিশ্চিত করুন যে, আপনার কাছে সঠিক এবং বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে (যেমন, প্রেস ক্রেডেনশিয়াল, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা ভিসা)।

● আপনার সাথে একটি পরিপূর্ণ চার্জ করা মোবাইল ফোন, কিছু নগদ টাকা, প্রয়োজনীয় ওষুধ, এবং পানীয় জল, শক্তি জোগাবে এমন জলখাবার এবং গরম কাপড়ের মতো প্রয়োজনীয় মৌলিক সামগ্রী সঙ্গে নিন।

● পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত পোষাক পরুন, পুলিশের হাতে আটক হলে আপনাকে দীর্ঘ সময় একই পোশাক পরে থাকতে হতে পারে। 

● আপনি যদি গ্রেপ্তার হন তাহলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন সে ব্যাপারে ভেবে রাখুন। সচেতন থাকুন যে, পরিস্থিতি অনুযায়ী পুলিশ অফিসাররা মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে পারে এবং আক্রমণাত্মক হতে পারে।

● আপনি গ্রেপ্তার হলে যোগাযোগ করা যাবে– এমন একজন আইনজীবী ঠিক করে রাখুন। ফোনে তাদের নাম এবং যোগাযোগের নম্বর লিখে রাখুন। সেটি একটি কাগজের টুকরো বা আপনার হাতেও লিখে রাখুন।

আটক বা গ্রেপ্তার হলে

● শান্ত ও সশ্রদ্ধ থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। টুপি বা সানগ্লাস পরে থাকলে সেগুলি খুলে ফেলুন। সম্ভব হলে অফিসারের সাথে দৃষ্টি সংযোগ বজায় রাখুন এবং প্রতিরোধ করা থেকে বিরত থাকুন। 

● আপনি যদি গ্রেপ্তারের ছবি বা ভিডিও ধারণ করেন, তবে তা পুলিশকে উত্তেজিত করতে পারে এবং আপনার ডিভাইসগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত বা বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।

●  সম্ভব হলে আপনার ব্যাগ, সরঞ্জাম এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোকে আপনার দৃষ্টিসীমার মধ্যে রাখুন৷

● অ্যাজমা বা ডায়াবেটিসের মতো যেকোনো স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিশকে অবগত করুন। আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন ওষুধ গ্রহণ করলে গ্রেপ্তার করার সাথে সাথেই পুলিশকে জানান।

● আপনার যদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ইতিহাস থাকে বা সেই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগলে পুলিশকে জানান।

● সম্ভব হলে, জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা যায় এমন যত বেশি সম্ভব তথ্য নথিভুক্ত করুন। যেমন, তাদের নাম, নম্বর, বিভাগ এবং সহজেই শনাক্তযোগ্য বৈশিষ্ট্য (যেমন, ট্যাটু বা গোঁফ/দাঁড়ি)।

● আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি নজর দিন, যারা আপনার গ্রেপ্তারের সাক্ষী হতে পারে। প্রয়োজনে তাদের যথাযথ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলুন।

● আপনার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে, পুলিশ অফিসাররা আপনাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে পারে বা আপনাকে কোনো অপরাধ করার কথা স্বীকার করতে বাধ্য করতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আপনার নিজের ভাষ্যে অটল থাকুন। আপনি যা করেননি তা স্বীকার না করে আইনি সহায়তা আসার জন্য অপেক্ষা করুন।

● আপনি যদি কোনো পুলিশ অফিসার দ্বারা লাঞ্ছিত হন, তাহলে প্রাপ্ত আঘাত, গৃহীত চিকিৎসা এবং  হাসপাতালে যাওয়ার প্রমাণ রাখার চেষ্টা করুন। ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের নাম ও বাহ্যিক বিবরণ নথিভুক্ত করার চেষ্টা করুন।  

 অপহরণ

২০২২ সালের জানুয়ারিতে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন করার পরে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারপারসন পদের জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নির্দেশে কমলগঞ্জের সাংবাদিক হোসেন বক্সকে একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে থেকে অপহরণ এবং গুরুতরভাবে মারধরকরা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

১১ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে বাংলাদেশের একটি ভোট কেন্দ্রে একজন নারী অবস্থান করছেন। (এপি/আল-এমরুন গর্জন)

শারীরিক সুরক্ষা: নির্বাচনী সমাবেশ, ভোটকেন্দ্র ও বিক্ষোভ থেকে রিপোর্টিং

নির্বাচনের সময় সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের প্রায়ই জনাকীর্ণ সমাবেশ, প্রচার-প্রচারণা ও বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মতো কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে হয়। এপ্রিলে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল যে, সাংবাদিকেরা নির্বাচন কাভারের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না, পূর্বানুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না, বা সেখান থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। ইতিপূর্বে বাংলাদেশে সাংবাদিকেরা ভোট কেন্দ্রে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন শারীরিক হামলা এবং প্রবেশাধিকার না পাওয়ার মাধ্যমে। এই ধরনের ঘটনায় ঝুঁকি কমাতে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের নিম্নলিখিত নিরাপত্তা পরামর্শ বিবেচনা করা উচিত:

রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশ

প্রতিবাদ সমাবেশ সংক্রান্ত পরিকল্পনা

বাংলাদেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ একটি সাধারণ ঘটনা। পুলিশ অতীতে বিক্ষোভকারীদের দমন করতে গোলাবারুদ, রাবার বুলেট, পেলেট গান, টিয়ার গ্যাস, লাঠিসোটা ব্যবহার করেছে। যদি সহিংসতার আশঙ্কা থাকে, তাহলে প্রতিরক্ষামূলক নিরাপত্তা গগলস বা চশমা, হেলমেট, টিয়ার গ্যাস রেসপিরেটর ব্যবহার এবং প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরার কথা বিবেচনা করুন। আরও তথ্যের জন্য CPJ-এর ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামনির্দেশিকা দেখুন।

সতর্কতা ও অবস্থান

আপনার অবস্থান বিবেচনা করুন এবং সব সময় পরিস্থিতিগত সচেতনতা বজায় রাখুন। সম্ভব হলে, একটি সুবিধাজনক উঁচু স্থান খুঁজুন, যা আরও বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

● কীভাবে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যাবেন– তার একটি পরিকল্পনা রাখুন। সেই সঙ্গে, আপনি যদি অন্যদের সঙ্গে মিলে কাজ করেন, তাহলে জরুরী পরিস্থিতিতে কোথায় মিলিত হবেন– তা ঠিক করে রাখুন।

● নিকটতম চিকিৎসা সহায়তাকেন্দ্র চিহ্নিত করুন।

● ভিড়ের মধ্যে কাজ করলে কৌশল পরিকল্পনা করুন। ভিড়ের বাইরে থাকুন এবং মাঝখানে ঢুকে যাওয়া এড়িয়ে চলুন, যেখান থেকে বের হওয়া কঠিন হবে।

● ভীড় ও জমায়েত নিয়ে কর্তৃপক্ষের মনোভাব কী এবং তারা কেমন আচরণ করতে পারে– সেদিকে সব সময় খেয়াল রাখুন। জনতা উত্তেজিত হলে পুলিশ আরো বেশি  আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে (বা উল্টোটাও হতে পারে)। দৃশ্যমান  ইঙ্গিত, যেমন দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের পোশাক পরিহিত পুলিশের আগমন বা কোনো কিছু ছুড়ে মারা– এসব হলো সম্ভাব্য ইঙ্গিত যে, তারা আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে। এরকম বিপদ সংকেত বা রেড ফ্ল্যাগ দেখলে নিরাপদ স্থানে ফিরে যান বা দ্রুত প্রস্থানের পরিকল্পনা করুন।

● আলোকচিত্র সাংবাদিকদের সাধারণত ঘটনাগুলো আরও কাছ থেকে কাভার করতে হয় বলে তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। ফলে বিশেষভাবে তাদের দিকে কারও নজর রাখা উচিৎ। এবং ফটোগ্রাফারদের উচিৎ কিছু সময় পরপরই ভিউফাইন্ডার থেকে চোখ সরিয়ে চারপাশে খেয়াল করা। শ্বাসরোধের ঝুঁকি এড়াতে, ক্যামেরার ফিতা গলায় ঝুলিয়ে রাখবেন না। আলোকচিত্র সাংবাদিকদের প্রায়শই দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার সুযোগ থাকে না। ফলে ভীড়ের মধ্যে থাকার সময় কমিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ। ছবি তুলুন এবং বেরিয়ে যান। 

● ভীড়ের মধ্যে খুব বেশি সময় না থাকার ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিৎ সব সাংবাদিকদের। কারণ এটি খুব দ্রুত শত্রুভাবাপন্ন হয়ে উঠতে পারে। 

পুলিশের টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের আশঙ্কা থাকলে 

● টিয়ার গ্যাস ব্যবহারে হাঁচি, কাশি, থুথু, কান্না এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টিকারী শ্লেষ্মা তৈরি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ব্যক্তিদের বমি, এবং শ্বাস কষ্ট হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের বাতাসে ছড়িয়ে পড়া জীবাণুর মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যে ব্যক্তিরা হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন, বা যারা কোভিড ১৯-এর ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগে তালিকাভুক্ত, তাদের উচিৎ এ ধরনের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ঘটনা কাভার থেকে বিরত থাকা, যেখানে টিয়ার গ্যাসের ব্যবহার হতে পারে।

টিয়ার গ্যাসের সংস্পর্শ এবং এর প্রভাব মোকাবেলার বিষয়ে আরও নির্দেশনার জন্য, অনুগ্রহ করে সিপিজে-এর নাগরিক বিক্ষোভ সংক্রান্ত পরামর্শসমূহ (সিভিল ডিসঅর্ডার অ্যাডভাইজরি) দেখুন। (বাংলায়)

শারীরিক সুরক্ষাঃ আক্রমণ সংক্রান্ত

নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে এর আগে আওয়ামী লীগ এবং তাদের ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগের সদস্যদের কাছে সাংবাদিকদের হামলার শিকার হওয়ারঘটনাগুলো নথিভুক্ত করেছে সিপিজে। 

এ ধরনের আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:

● যে কোনো ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করার আগে সাংবাদিকদের সম্পর্কে প্রতিবাদকারীদের মেজাজ মূল্যায়ন করুন এবং সম্ভাব্য হামলাকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

● আক্রমণকারীকে শনাক্ত করতে শারীরিক অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করুন এবং আপনার নিজের শারীরিক অভিব্যক্তি ব্যবহার করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করুন।

● আক্রমণকারীর সাথে নিবিষ্ট দৃষ্টিতে যোগাযোগ রাখুন, খোলা হাতের অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করুন এবং শান্তভাবে কথা বলুন।

● বিপজ্জনক ব্যক্তি থেকে অন্তত একটি প্রলম্বিত হাতের দৈর্ঘ্যের সমান দূরত্বে থাকুন। যদি হাত দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয় তাহলে দূরে সরে যান এবং আগ্রাসন ছাড়াই দৃঢ়ভাবে নিজেকে মুক্ত করে দূরে সরে যান। কোণঠাসা হয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় পড়লে, চিৎকার করুন। 

● আগ্রাসন বেড়ে গেলে, নিজের একটি হাত মুক্ত রাখুন এবং সেটি দিয়ে আপনার মাথার সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এড়াতে ছোট ছোট কিছু সুচিন্তিত পদক্ষেপের মাধ্যমে পেছনে সরে যান। দলবদ্ধ থাকলে একসঙ্গে থাকুন এবং একে অপরের হাত ধরে রাখুন।  

● আক্রমণের ঘটনা নথিভুক্ত করাও কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিকসুলভ কাজ হতে পারে। তবে পরিস্থিতি এবং নিজের সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। আগ্রাসী ব্যক্তির ছবি তোলা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে  তুলতে পারে।

● যদি আপনাকে আগ্রাসীভাবে ঘিরে ধরা হয়, তাহলে আততায়ী যায় চায়– তা দিয়ে দিন। সরঞ্জামাদির থেকে আপনার জীবনের মূল্য বেশি।

শারীরিক সুরক্ষা: শত্রুভাবাপন্ন কমিউনিটি থেকে রিপোর্টিং

সাংবাদিকদের মাঝে মাঝে এমন এলাকা বা কমিউনিটি থেকে রিপোর্টিং করতে হয় যারা প্রচারমাধ্যম বা বহিরাগতদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ। এটি ঘটতে পারে যদি একটি কমিউনিটি মনে করে যে প্রচারমাধ্যম তাদের যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে না বা তাদের নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় সাংবাদিকদের এমন কমিউনিটি থেকে দীর্ঘ সময় ধরে রিপোর্টিং করতে হতে পারে– যারা সংবাদমাধ্যমের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে।

● সম্ভব হলে, সেই কমিউনিটি এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আগে থেকেই গবেষণা করুন। সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে– সে সম্পর্কে বোঝাপড়া তৈরি করুন এবং প্রয়োজন হলে এমনভাবে চলাফেরা করুন, যেন তা কম মনোযোগ আকর্ষণ করে। 

● কমিউনিটিতে আগে থেকেই কিছু প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করুন। আমন্ত্রণ ছাড়া সেখানে চলে গেলে বা আপনার হয়ে অন্য কেউ কথা বলছে– এমন পরিস্থিতি সমস্যা তৈরি করতে পারে। আপনার যদি সেই এলাকা সম্পর্কে জানাশোনা না থাকে, বা আপনাকে বহিরাগত বলে বিবেচনা করা হয়, তাহলে স্থানীয় কোনো নেতৃস্থানীয় বা সুনামসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিন বা সঙ্গে রাখুন, যিনি সেখানে আপনাকে সঙ্গ দিতে পারবেন এবং আপনার কর্মকাণ্ড সমন্বয়ে সহায়তা করতে পারবেন। একজন স্থানীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তিকেও চিহ্নিত করে রাখুন, যিনি জরুরী পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারেন।

● যদি সেই কমিউনিটিতে অ্যালকোহল বা মাদকের ব্যবহার হয়ে থাকে, তাহলে সতর্ক থাকুন যে, অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

● আদর্শ উপায় হলো একটি দলের সঙ্গে কাজ করা বা ব্যাকআপ রাখা। ঝুঁকির মাত্রার উপর নির্ভর করে, ব্যাকআপ দলটি আশেপাশে কোনো নিরাপদ স্থানে (যেমন, শপিং মল বা পেট্রোল স্টেশন) অপেক্ষা করতে পারে প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য।

● এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করুন এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন। ঝুঁকি বেশি হলে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করুন। আপনি যখন কাজে মনোযোগী থাকবেন, তখন কোনো হুমকি তৈরি হলে কেউ যেন আপনাকে এবং আপনার সরঞ্জমাদির সুরক্ষা দিতে পারে– তা নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বিবেচনা করুন।

● আপনার গাড়ি এমন জায়গায় রাখুন, যেন যেকোনো মুহূর্তে সেটি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। খুব ভাল হয় যদি গাড়িচালক গাড়ির ভেতরেই থাকেন। 

● যদি আপনাকে আপনার যানবাহন থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে কীভাবে সেখানে ফিরে যেতে হবে– তা জেনে রাখুন। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সনাক্ত করুন এবং সহকর্মীদের সেসব তথ্য জানিয়ে রাখুন।

● জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজনে কোথায় যেতে হবে তা জানুন এবং প্রস্থানের কৌশল তৈরি করুন।

● কোনো ব্যক্তির ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণের আগে সব সময় সম্মতি নিন, বিশেষ করে যদি আপনার প্রস্থানের সহজ পথ না থাকে।

● প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যাওয়া মাত্রই সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ুন। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় সেখানে থাকবেন না। কখন কাজ শেষ করে বেরিয়ে যাবেন– তা আগে থেকে ভেবে রাখা এবং সেই সময় অনুযায়ীই বেরিয়ে পড়া কাজে দেবে। আপনার দলের কোনো সদস্য অস্বস্তি বোধ করলে, সেটি নিয়ে আলোচনায় সময় নষ্ট করবেন না। দ্রুত প্রস্থান করুন।

● সংবাদমাধ্যম কোম্পানির ব্র্যান্ডিং নেই– এমন উপযুক্ত ও সম্মানসূচক পোশাক পরুন। প্রয়োজনে সরঞ্জাম এবং যানবাহন থেকে সংবাদমাধ্যমের লোগো সরিয়ে ফেলুন । 

● ব্যবহারবিধি জানা থাকলে একটি মেডিকেল কিট সঙ্গে নিন।

● কমিউনিটির ব্যক্তি এবং তাদের বিশ্বাস এবং উদ্বেগের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল থাকুন।

● সঙ্গে নেয়া মূল্যবান জিনিসপত্র এবং নগদ অর্থের পরিমাণ সীমিত করুন। চোর কিংবা ছিনতাইকারী আপনার সরঞ্জামের  প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে কিনা বিবেচনা করুন। যদি আপনি আক্রান্ত হন তবে তারা যা চায় তা দিয়ে দিন। সরঞ্জামদির চেয়ে আপনার জীবনের মূল্য বেশি।

● রাতে কাজ করা এড়িয়ে চলুন। কারণ এসময় ঝুঁকি নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।

● সম্প্রচার বা প্রকাশনার আগে, বিবেচনা করুন যে আপনাকে সেই জায়গায় আবার ফিরে যেতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কাভারেজ কী কোনো প্রভাব ফেলবে?

Exit mobile version